ব্লকচেইন কি এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে সহজ ভাষায়

ব্লকচেইন কি এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে—জানুন এই বিপ্লবী প্রযুক্তির গোপন রহস্যগুলো!

বর্তমান ডিজিটাল যুগে ব্লকচেইন কি এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে তা বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ব্লকচেইন প্রযুক্তি শুধু ক্রিপ্টোকারেন্সির জন্য নয়, বিভিন্ন শিল্প ও সরকারি সেবায় স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা ও বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে বিপ্লব ঘটাচ্ছে। এই প্রযুক্তির মূল ধারণা, কাজ করার পদ্ধতি এবং এর ব্যবহারিক প্রয়োগগুলো বুঝে ওঠা ডিজিটাল পৃথিবীতে সফলভাবে এগিয়ে চলার জন্য অপরিহার্য। এই লেখায় আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব ব্লকচেইন কি এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে, যার মাধ্যমে আপনি প্রযুক্তিটির মৌলিক দিক থেকে শুরু করে এর ব্যবহার পর্যন্ত জানতে পারবেন।

পোস্ট সূচীপত্র

ব্লকচেইন কি? ব্লকচেইন প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে

ব্লকচেইন কি?

ব্লকচেইন একটি decentralized digital ledger যা একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্কে তথ্য ব্লক আকারে সংরক্ষণ করেন এবং ক্রিপ্টোগ্রাফি দ্বারা সংযুক্ত থাকে, ফলে তথ্য পরিবর্তন করা প্রায় অসম্ভব হয় InvestopediaAmazon Web Services, Inc.

ব্লকচেইন প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে ?

  • এটি যে কোনো কেন্দ্রীয় অথরিটি (যেমন ব্যাংক) ছাড়াই ট্রাস্ট তৈরি করে। 
  • প্রতিটি ট্রানজেকশন একটি ব্লকে লেখাজোড়া হয়, এবং ব্লক একটি ক্রিপ্টোগ্রাফিক হ্যাশের মাধ্যমে আগের ব্লকের সাথে সংযুক্ত হয় InvestopediaChainlink 
  • পাবলিক ব্লকচেইনে—যেমন Bitcoin—নোড হিসেবে পরিচিত কম্পিউটারগুলো পুরো লেজার রাখে এবং একে অপরের সাথে যাচাই করে। কোনো অসঙ্গতি ধরলে ব্লক গ্রহণযোগ্য হয় না ChainlinkCoursera 

ব্লকচেইন প্রযুক্তির কাজের পদ্ধতি 

ব্লক, নোড, ও মাইনিং/ভ্যালিডেশন

  • Blocks: প্রতিটি ব্লকে থাকে ট্রানজেকশন ডেটা, সময়, এবং পূর্ববর্তী ব্লকের হ্যাশ Coursera 
  • Nodes: নোড হলো সেই কম্পিউটার যেগুলো লেজারের পূর্ণ কপি রাখে এবং নতুন ব্লকের বৈধতা যাচাই করে CourseraChainlink 
  • Miners / Validators: ব্লক যুক্ত করতে যারা কাজ করে। Proof-of-Work (PoW) বা Proof-of-Stake (PoS) পদ্ধতি ব্যবহার হতে পারে Wikipedia+1 

PoW এবং PoS এর তুলনা

  • Proof of Work (PoW): শক্তিশালী গণনামূলক কাজ করে ব্লক যুক্ত করা হয়—যেমন Bitcoin–এ, যেখানে এনার্জির খরচ অনেক বেশি Wikipedia 
  • Proof of Stake (PoS): যারা বেশি কয়েন ধরে রাখে (stake করে) তারা validators হোন—এনার্জি কম লাগে এবং মধ্যস্বত্ব সুযোগ কম Wikipedia 

স্মার্ট কনট্রাক্ট (Smart Contracts)

  • Ethereum-এর মতো ব্লকচেইনে লেখা প্রোগ্রাম যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে শর্ত পূরণে কাজ করে Wikipedia+1 
  • নোড সহ নেটওয়ার্ক ব্লকচেইনে কোড ডিপ্লয় করে এবং পরবর্তীতে এটি পরিবর্তনাযোগ্য নয় Wikipedia 

ব্লকচেইন ব্যবহারের ক্ষেত্র

ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ডিজিটাল লেজার

  • Bitcoin হল প্রথম ব্লকচেইন ভিত্তিক ডিজিটাল মুদ্রা, যেখানে লেনদেন লেজারে রেকর্ড হয় এবং পরবর্তীতে যাচাইযোগ্য হয় NIST PublicationsInvestopedia 
  • স্বচ্ছতা ও trust minimization: কোনো তৃতীয় পক্ষ ছাড়া ট্রানজেকশন সম্পন্ন হয় Chainlink 

ডিফাই (DeFi) ও স্মার্ট কনট্রাক্ট

  • ডিফাই হলো 금융 সেবা যা ব্লকচেইনের স্মার্ট কনট্রাক্ট দিয়ে সরাসরি এলাকা-সীমাহীনভাবে কাজ করে Wikipedia 

অন্যান্য সেক্টর

  • সরকার, স্বাস্থ্য, এবং সাপ্লাই চেইন: সরকারি নথি, চিকিৎসা তথ্য, এবং রফতানি-আমদানির ট্র্যাকিংয়ের জন্য ব্যবহার হচ্ছে InvestopediaPMC 
  • বাণিজ্যকারিতা, AI, আইডেন্টিটি: বড় প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংক উপযোগী সিস্টেম তৈরি করছে Financial TimesWIRED 

ব্লকচেইনের সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ

সুবিধা বিস্তারিত
নিরাপত্তা ও পরিবর্তন-নিষেধ ব্লকে তথ্য বদাল কঠিন
স্বচ্ছতা লেনদেন সব নোডে দৃশ্যমান
মধ্যসত্ব কম তৃতীয় পক্ষের দরকার কম
স্বয়ংক্রিয়তা SMART স্মার্ট কনট্রাক্ট দিয়ে সম্পাদনা

চ্যালেঞ্জ:

  • স্কেলেবিলিটি সমস্যা: অল্টারনেটিভ দ্রুত লেনদেন চায় কিন্তু ব্লকচেইন ধীর হতে পারে InvestopediaWIRED 
  • এনার্জি খরচ: PoW ধারায় উচ্চ বিদ্যুৎ ব্যবহারের সমস্যা InvestopediaWikipedia 
  • কোয়ান্টাম হুমকি: ভবিষ্যতে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মাধ্যমে ক্রিপ্টো সুরক্ষা দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা Barron’s 

ভবিষ্যতের দৃশ্যপট—বাংলাদেশসহ বিশ্বে

  • বাংলাদেশে সম্ভাবনা: সরকারি লেনদেন, কৃষি সাপ্লাইচেইন, স্বাস্থ্য সেবা ও আইডেন্টিটি ব্যবস্থায় ব্লকচেইনের ব্যবহার দৃশ্যমান। 
  • গ্লোবাল ট্রেডিং ও ফিনটেকে ব্লকচেইন: BlackRock, JPMorgan-এর মতো প্রতিষ্ঠান already ব্যবহার করছে Financial Times 
  • রেগুলেশন ও সাসটেইনেবিলিটি: নিয়মনীতি ও পরিবেশগত দায়বদ্ধতা গুরুত্ব পাচ্ছে Financial TimesBarron’s 

ব্লকচেইন এর ধারণা

ব্লকচেইন এর ধারণা বলতে মূলত বোঝানো হয়—
একটি ডিজিটাল লেজার সিস্টেম, যেখানে তথ্য বা লেনদেন (Transactions) ব্লক আকারে সংরক্ষণ করা হয় এবং প্রতিটি ব্লক একে অপরের সাথে ক্রিপ্টোগ্রাফিক হ্যাশ দিয়ে যুক্ত থাকে। এর ফলে একবার কোনো ব্লকে তথ্য যুক্ত হলে তা পরিবর্তন বা মুছে ফেলা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়।

ব্লকচেইনের মূল বৈশিষ্ট্য

  1. বিকেন্দ্রীকৃত (Decentralized)
    এখানে কোনো কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ (যেমন ব্যাংক) নেই। নেটওয়ার্কের প্রতিটি কম্পিউটার (Node) সমান ক্ষমতা রাখে। 
  2. স্বচ্ছ (Transparent)
    লেনদেনের রেকর্ড সবার জন্য উন্মুক্ত এবং যাচাইযোগ্য। 
  3. অপরিবর্তনযোগ্য (Immutable)
    একবার ডেটা রেকর্ড হলে তা পরিবর্তন করা কঠিন, কারণ প্রতিটি ব্লক আগের ব্লকের সাথে ক্রিপ্টোগ্রাফিকভাবে যুক্ত থাকে। 
  4. নিরাপদ (Secure)
    ক্রিপ্টোগ্রাফি ব্যবহার করে তথ্য সুরক্ষিত রাখা হয়, যা হ্যাক করা কঠিন। 

সহজ উদাহরণ

ভাবুন, আপনি এবং আপনার বন্ধুরা একটি নোটবুক ব্যবহার করছেন, যেখানে প্রতিটি পৃষ্ঠায় (ব্লক) লেনদেনের তথ্য লেখা হয়। নতুন পৃষ্ঠা যোগ হলে আগের পৃষ্ঠার একটি সারাংশ (হ্যাশ) সেখানে লেখা থাকে। কেউ যদি আগের পৃষ্ঠা বদলানোর চেষ্টা করে, তবে সেই সারাংশ বদলে যাবে এবং সবাই বুঝে যাবে যে তথ্য পরিবর্তন হয়েছে।

ব্লকচেইন এর মূলনীতি

ব্লকচেইন এর মূলনীতি বলতে সেই মৌলিক ধারণা ও প্রযুক্তিগত ভিত্তিকে বোঝানো হয়, যা এই সিস্টেমকে নিরাপদ, বিকেন্দ্রীভূত এবং স্বচ্ছ রাখে।
নিচে ব্লকচেইনের প্রধান মূলনীতি গুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো—

1. বিকেন্দ্রীকরণ (Decentralization)

প্রথাগত সিস্টেমে (যেমন ব্যাংক, সার্ভার) সব তথ্য একটি কেন্দ্রীয় ডাটাবেসে সংরক্ষিত থাকে। কিন্তু ব্লকচেইনে তথ্য রাখা হয় একটি Distributed Ledger-এ, যা নেটওয়ার্কের সব নোডে সমানভাবে ছড়িয়ে থাকে।
🔹 ফলাফল: কোনো একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পুরো সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।

2. অপরিবর্তনযোগ্যতা (Immutability)

একবার কোনো ব্লকে তথ্য যুক্ত হলে তা পরিবর্তন করা প্রায় অসম্ভব। প্রতিটি ব্লক আগের ব্লকের ক্রিপ্টোগ্রাফিক হ্যাশ ধারণ করে। কেউ যদি পুরনো ব্লকের ডেটা বদলানোর চেষ্টা করে, তবে সব পরবর্তী ব্লকের হ্যাশও পরিবর্তন হয়ে যাবে এবং নেটওয়ার্ক তা সাথে সাথে শনাক্ত করবে।

3. সম্মতি প্রক্রিয়া (Consensus Mechanism)

সব নোড যাতে একমত হয়ে একই ডেটা গ্রহণ করে, তার জন্য ব্লকচেইন Consensus Algorithm ব্যবহার করে।
সবচেয়ে প্রচলিত মডেলগুলো হল:

  • Proof of Work (PoW) – বিটকয়েন ব্যবহার করে 
  • Proof of Stake (PoS) – ইথেরিয়াম 2.0 ব্যবহার করে 

4. ক্রিপ্টোগ্রাফি (Cryptography)

ডেটা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্লকচেইন পাবলিক কী (Public Key) এবং প্রাইভেট কী (Private Key) এনক্রিপশন ব্যবহার করে।
🔹 ফলাফল: শুধু মালিকই তার ডেটা সাইন করতে পারে এবং সবার জন্য তা যাচাইযোগ্য হয়।

5. স্বচ্ছতা (Transparency)

সব লেনদেনের তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত এবং যে কেউ যাচাই করতে পারে। তবে অংশগ্রহণকারীর পরিচয় গোপন থাকে (Pseudonymity)।

ব্লকচেইন প্রযুক্তির ব্যবহার

ব্লকচেইন প্রযুক্তির ব্যবহার বর্তমানে শুধু ক্রিপ্টোকারেন্সির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং বিভিন্ন খাতে এর ব্যাপক প্রয়োগ হচ্ছে। নিচে প্রধান ব্যবহারগুলো বিস্তারিত দেওয়া হলো—

1. ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency)

  • বিটকয়েন, ইথেরিয়াম, লাইটকয়েন ইত্যাদি ডিজিটাল মুদ্রা ব্লকচেইন ভিত্তিক। 
  • এখানে Peer-to-Peer লেনদেন হয়, ব্যাংকের মতো কোনো মধ্যস্থতাকারী লাগে না। 

2. ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত (Banking & Finance)

  • আন্তর্জাতিক অর্থ স্থানান্তর দ্রুত ও কম খরচে করা যায়। 
  • RippleStellar এর মতো ব্লকচেইন সল্যুশন ব্যবহার হচ্ছে রিয়েল-টাইম পেমেন্ট সিস্টেমে। 

3. সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট (Supply Chain Management)

  • পণ্যের উৎপাদন থেকে গ্রাহকের হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ ব্লকচেইনে রেকর্ড করা যায়। 
  • IBM Food Trust ব্যবহার করছে ওয়ালমার্ট, নেসলে প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান খাদ্য নিরাপত্তা ট্র্যাক করতে। 

4. ভোটিং সিস্টেম (Voting System)

  • ব্লকচেইন ভিত্তিক ভোটিং সিস্টেমে জালিয়াতি প্রায় অসম্ভব। 
  • ভোটদাতার পরিচয় গোপন থাকে, কিন্তু ভোটের ফলাফল স্বচ্ছ থাকে। 

5. স্বাস্থ্য খাত (Healthcare)

  • রোগীর মেডিকেল রেকর্ড নিরাপদে সংরক্ষণ ও শেয়ার করা যায়। 
  • শুধুমাত্র অনুমোদিত ব্যক্তিরাই তথ্য অ্যাক্সেস করতে পারে। 

6. স্মার্ট কন্ট্রাক্টস (Smart Contracts)

  • প্রোগ্রাম করা চুক্তি যা নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হয়। 
  • ইথেরিয়াম ব্লকচেইনে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। 

7. NFT ও ডিজিটাল অ্যাসেট (NFT & Digital Assets)

  • শিল্পকর্ম, সঙ্গীত, ভিডিও বা গেমের ডিজিটাল মালিকানা প্রমাণে ব্লকচেইন ব্যবহার হয়। 

8. ডিজিটাল আইডেন্টিটি (Digital Identity)

  • নাগরিকদের নিরাপদ ডিজিটাল পরিচয়পত্র (ID) প্রদান। 
  • জাল পরিচয় বা তথ্য ফাঁসের ঝুঁকি কমে যায়

ব্লকচেইন এর সুবিধা ও অসুবিধা

ব্লকচেইন এর সুবিধা ও অসুবিধা
ব্লকচেইন প্রযুক্তি অনেক ক্ষেত্রেই বিপ্লব এনেছে, তবে এর কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। নিচে সুবিধা ও অসুবিধা উভয় দিকই বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো—

ব্লকচেইনের সুবিধা

1. বিকেন্দ্রীকরণ (Decentralization)

  • কোনো কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের প্রয়োজন হয় না, ফলে একক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে। 

2. উচ্চ নিরাপত্তা (High Security)

  • ক্রিপ্টোগ্রাফি ব্যবহার করে তথ্য সুরক্ষিত থাকে, হ্যাক করা কঠিন। 

3. স্বচ্ছতা (Transparency)

  • লেনদেনের তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত এবং যাচাইযোগ্য। 

4. অপরিবর্তনযোগ্যতা (Immutability)

  • একবার তথ্য যুক্ত হলে তা পরিবর্তন বা মুছে ফেলা প্রায় অসম্ভব। 

5. দ্রুত ও কম খরচে লেনদেন

  • ব্যাংক বা মধ্যস্থতাকারীর প্রয়োজন হয় না, ফলে সময় ও খরচ কমে। 

❌ ব্লকচেইনের অসুবিধা

1. স্কেলেবিলিটি সমস্যা (Scalability Issue)

  • বেশি পরিমাণ লেনদেন একসাথে প্রসেস করতে সমস্যা হয়, ফলে সিস্টেম ধীর হয়ে যেতে পারে। 

2. বিদ্যুৎ খরচ বেশি (High Energy Consumption)

  • Proof of Work (PoW) ভিত্তিক ব্লকচেইনে মাইনিং করতে প্রচুর বিদ্যুৎ লাগে। 

3. ডেটা স্থায়িত্ব (Data Permanence)

  • ভুল তথ্য একবার ব্লকচেইনে চলে এলে তা মুছে ফেলা কঠিন। 

4. প্রযুক্তিগত জটিলতা (Technical Complexity)

  • সাধারণ ব্যবহারকারীর জন্য প্রযুক্তি বোঝা কঠিন হতে পারে। 

5. নিয়ন্ত্রন ও আইনগত বাধা (Regulatory Issues)

  • অনেক দেশে ব্লকচেইন বা ক্রিপ্টোকারেন্সির জন্য সুনির্দিষ্ট আইন নেই।

ব্লকচেইন প্রযুক্তির উদাহরণ

ব্লকচেইন প্রযুক্তির উদাহরণ
ব্লকচেইন প্রযুক্তি বিভিন্ন খাতে ব্যবহার হচ্ছে, এবং এর অনেক বাস্তব উদাহরণ রয়েছে। নিচে কিছু উল্লেখযোগ্য উদাহরণ তুলে ধরা হলো—

1. বিটকয়েন (Bitcoin)

  • প্রথম ব্লকচেইন-ভিত্তিক ক্রিপ্টোকারেন্সি। 
  • উদ্দেশ্য: ব্যাংক ছাড়া পিয়ার-টু-পিয়ার (P2P) অর্থ লেনদেন। 
  • ওয়েবসাইট: https://bitcoin.org 

2. ইথেরিয়াম (Ethereum)

  • শুধু ক্রিপ্টোকারেন্সি নয়, স্মার্ট কন্ট্রাক্ট ও বিকেন্দ্রীভূত অ্যাপ্লিকেশন (DApps) চালানোর প্ল্যাটফর্ম। 
  • ওয়েবসাইট: https://ethereum.org 

3. Ripple (XRP)

  • আন্তর্জাতিক অর্থ স্থানান্তরের জন্য তৈরি। 
  • ব্যাংক ও পেমেন্ট প্রোভাইডাররা দ্রুত ও সাশ্রয়ী ট্রান্সফার করতে ব্যবহার করে। 
  • ওয়েবসাইট: https://ripple.com 

4. IBM Food Trust

  • খাদ্য সরবরাহ চেইনে (Supply Chain) স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা আনতে ব্লকচেইন ব্যবহার করছে। 
  • ওয়ালমার্ট ও নেসলে এই সিস্টেম ব্যবহার করছে। 
  • ওয়েবসাইট: https://www.ibm.com/blockchain/solutions/food-trust 

5. VeChain

  • সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টে বিশেষায়িত ব্লকচেইন। 
  • পণ্যের আসল-নকল যাচাই ও উৎপাদন প্রক্রিয়া ট্র্যাক করতে ব্যবহৃত হয়। 
  • ওয়েবসাইট: https://vechain.org 

6. Polygon (পূর্বে Matic Network)

  • ইথেরিয়ামের স্কেলেবিলিটি সমস্যা সমাধানে তৈরি। 
  • দ্রুত ও কম খরচে ট্রানজ্যাকশন সুবিধা দেয়। 
  • ওয়েবসাইট: https://polygon.technology 

ব্লকচেইন এর ভবিষ্যৎ

ব্লকচেইন এর ভবিষ্যৎ
ব্লকচেইন প্রযুক্তি এখনও বিকাশমান পর্যায়ে আছে, কিন্তু এর সম্ভাবনা অনেক বড়। আসন্ন বছরগুলোতে এই প্রযুক্তি শুধু ক্রিপ্টোকারেন্সির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে আরও বিস্তৃত খাতে ব্যবহৃত হবে। নিচে ব্লকচেইনের ভবিষ্যৎ নিয়ে সম্ভাব্য দিকগুলো তুলে ধরা হলো—

1. বিকেন্দ্রীভূত অর্থনীতি (Decentralized Finance – DeFi) এর উত্থান

  • ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিকল্প হিসেবে ব্লকচেইন-ভিত্তিক আর্থিক সেবা জনপ্রিয় হবে। 
  • ঋণ, বিনিয়োগ, বীমা ইত্যাদি সবকিছু মধ্যস্থতাকারী ছাড়াই সম্ভব হবে। 

2. সরকারি খাতে গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি

  • ভোটিং সিস্টেম, ভূমি রেকর্ড, নাগরিক পরিচয়পত্র—সবকিছু ব্লকচেইনে সংরক্ষণ করে স্বচ্ছতা ও জালিয়াতি রোধ করা সম্ভব হবে। 

3. সাপ্লাই চেইনে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা

  • কৃষি, শিল্প, ফার্মাসিউটিক্যালসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উৎপাদন থেকে ডেলিভারি পর্যন্ত সবকিছু রিয়েল-টাইম ট্র্যাকিং হবে। 

4. NFT ও ডিজিটাল মালিকানার বিস্তার

  • শিল্পকর্ম, সংগীত, ভিডিও গেম, এমনকি ভার্চুয়াল রিয়েল এস্টেটের মালিকানা ব্লকচেইনে সংরক্ষণ করা হবে। 

5. IoT (Internet of Things) এর সাথে সমন্বয়

  • ব্লকচেইন IoT ডিভাইসগুলোর মধ্যে নিরাপদ ও স্বয়ংক্রিয় ডেটা বিনিময় নিশ্চিত করবে। 

6. সবুজ ব্লকচেইন (Green Blockchain)

  • Proof of Work-এর উচ্চ বিদ্যুৎ খরচ কমাতে পরিবেশবান্ধব Proof of Stake বা অন্যান্য এনার্জি-ইফিশিয়েন্ট সমাধান জনপ্রিয় হবে। 

7. বৃহত্তর আইনগত কাঠামো

  • বিশ্বের অনেক দেশ ব্লকচেইন ও ক্রিপ্টোকারেন্সির জন্য পরিষ্কার আইন ও বিধিনিষেধ তৈরি করবে, যাতে ব্যবসা ও ব্যবহার উভয়ই নিরাপদ হয়।

বাংলাদেশে ব্লকচেইন প্রযুক্তি

 

বাংলাদেশে ব্লকচেইন প্রযুক্তি
বাংলাদেশে ব্লকচেইন প্রযুক্তির ব্যবহার ও গ্রহণযোগ্যতা গত কয়েক বছরে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারি, বেসরকারি ও স্টার্টআপ উভয় ক্ষেত্রেই এই প্রযুক্তির সম্ভাবনা বোঝা যাচ্ছে। নিচে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ব্লকচেইন প্রযুক্তির বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হলো—

১. সরকারি উদ্যোগ ও গবেষণা

  • বাংলাদেশের ICT Division ব্লকচেইন প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা ও উন্নয়নে আগ্রহী। 
  • Bangladesh Bankসেন্ট্রাল ব্যাংক ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ডিজিটাল টাকার সম্ভাবনা মূল্যায়ন করছে। 
  • কিছু সরকারি প্রকল্পে ব্লকচেইন ভিত্তিক সাপ্লাই চেইন ও আইডেন্টিটি ব্যবস্থাপনা পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হচ্ছে। 

২. ব্যাংক ও ফিনটেক সেক্টর

  • বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংক ডিজিটাল লেনদেন ও নিরাপত্তা বাড়াতে ব্লকচেইন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। 
  • বিকাশ, নগদ মত মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস ব্লকচেইনের সম্ভাবনা খুঁজছে। 

৩. স্টার্টআপ ও প্রযুক্তি কোম্পানি

  • বাংলাদেশে অনেক স্টার্টআপ ব্লকচেইন ভিত্তিক সমাধান তৈরি করছে, যেমন কৃষি সাপ্লাই চেইন ট্র্যাকিং, স্বাস্থ্যসেবা তথ্য সংরক্ষণ ইত্যাদি। 
  • Krishi Shwapno এর মতো প্ল্যাটফর্ম কৃষকদের জন্য ব্লকচেইন ব্যবহার করছে। 

৪. শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ

  • বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে ব্লকচেইন প্রযুক্তি শেখানো হচ্ছে। 
  • ঢাকার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস (BUP) ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (SUST) এ ব্লকচেইন নিয়ে কোর্স চালু হয়েছে। 

৫. চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

  • আইনি অপ্রতিষ্ঠিততা: বাংলাদেশে এখনও ব্লকচেইন ও ক্রিপ্টোকারেন্সির জন্য সুস্পষ্ট আইন ও নীতিমালা তৈরি হয়নি। 
  • জনসচেতনতা কম: প্রযুক্তির সুবিধা ও ব্যবহার সম্পর্কে সাধারণ মানুষের জ্ঞান সীমিত। 
  • বড় সুযোগ: সঠিক নীতিমালা ও প্রযুক্তি গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি, কৃষি, স্বাস্থ্য, ও সরকারি সেবায় বিপ্লব আনা সম্ভব। 

ব্লকচেইন প্রযুক্তি কেন গুরুত্বপূর্ণ

ব্লকচেইন প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি তথ্য সংরক্ষণ ও লেনদেনের ক্ষেত্রে একটি নিরাপদ, স্বচ্ছ এবং বিকেন্দ্রীকৃত ব্যবস্থা প্রদান করে। প্রথাগত কেন্দ্রীভূত ডাটাবেসের তুলনায় ব্লকচেইন হ্যাকিং বা তথ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা অনেক কম। এটি তৃতীয় পক্ষের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দেয় এবং লেনদেনের গতি ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। ফলে ব্যাংকিং, স্বাস্থ্য, সাপ্লাই চেইন ও সরকারি সেবাসহ বহু ক্ষেত্রে ব্লকচেইন প্রযুক্তির গুরুত্ব বেড়ে চলেছে।

ব্লকচেইন দিয়ে কি করা যায়

ব্লকচেইন দিয়ে আপনি নিরাপদভাবে ডিজিটাল লেনদেন করতে পারেন, ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করতে পারেন, স্মার্ট কন্ট্রাক্ট ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয় চুক্তি সম্পাদন করতে পারেন এবং সরবরাহ চেইন ম্যানেজমেন্টে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে পারেন। এছাড়াও ভোটিং সিস্টেম, ডিজিটাল আইডেন্টিটি, স্বাস্থ্যসেবা তথ্য সংরক্ষণ ও NFT (Non-Fungible Token) ক্রিয়েশনেও ব্লকচেইন ব্যবহার হচ্ছে। এটি বিশ্বব্যাপী তথ্য বিনিময় ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমের নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে।

ব্লকচেইন কি নিরাপদ

হ্যাঁ, ব্লকচেইন অত্যন্ত নিরাপদ একটি প্রযুক্তি। এর প্রতিটি ব্লক ক্রিপ্টোগ্রাফিক হ্যাশ দ্বারা সুরক্ষিত এবং একটি ব্লক পরিবর্তন করলে পরবর্তী সব ব্লকের তথ্যও পরিবর্তিত হয়, যা নেটওয়ার্কের নোডগুলো দ্বারা সহজেই শনাক্ত করা যায়। এছাড়াও ব্লকচেইনের বিকেন্দ্রীকরণ এর নিরাপত্তাকে অনেকগুণ বৃদ্ধি করে। তবে, ব্যবহারকারীর প্রাইভেট কী যদি সুরক্ষিত না থাকে, তাহলে নিরাপত্তায় ঝুঁকি থাকতে পারে। তাই ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।

ব্লকচেইন প্রযুক্তি কোথায় ব্যবহার হয়

ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার হয় ক্রিপ্টোকারেন্সি, ব্যাংকিং ও আর্থিক লেনদেন, সরবরাহ চেইন ম্যানেজমেন্ট, স্বাস্থ্যসেবা তথ্য সংরক্ষণ, ভোটিং সিস্টেম, স্মার্ট কন্ট্রাক্ট, ডিজিটাল আইডেন্টিটি এবং NFT মার্কেটে। এছাড়া বড় বড় কোম্পানি ও সরকারগুলো তাদের তথ্যের নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধির জন্য ব্লকচেইন প্রযুক্তি গ্রহণ করছে। বাংলাদেশেও কৃষি, শিক্ষা ও সরকারি সেবায় এই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে।

ব্লকচেইন প্রযুক্তি কবে থেকে শুরু হয়েছে

ব্লকচেইন প্রযুক্তির শুরু ২০০৮ সালে, যখন সতোশি নাকামোতো নামের একজন বা গোষ্ঠী “Bitcoin: A Peer-to-Peer Electronic Cash System” নামে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। এই গবেষণাপত্রের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ব্লকচেইন ভিত্তিক ডিজিটাল মুদ্রা বিটকয়েনের ধারণা আসে। এরপর থেকে ব্লকচেইন প্রযুক্তি বিকাশ লাভ করে ক্রিপ্টোকারেন্সি ছাড়াও অন্যান্য খাতে ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়।

ডিজিটাল লেজার সিস্টেম

ডিজিটাল লেজার সিস্টেম হলো একটি ইলেকট্রনিক ডেটাবেস যেখানে লেনদেনের তথ্য ডিজিটাল ফরম্যাটে সংরক্ষণ করা হয়। ব্লকচেইন হল এই ধরনের একটি লেজার যা বিকেন্দ্রীকৃত নেটওয়ার্কে পরিচালিত হয় এবং তথ্য ব্লক আকারে সাজানো থাকে। ডিজিটাল লেজারের মাধ্যমে তথ্য দ্রুত আপডেট এবং যাচাই করা যায়, যা পারস্পরিক বিশ্বাস ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে। বিশেষ করে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে ডিজিটাল লেজারের গুরুত্ব অপরিসীম।

বিকেন্দ্রীভূত নেটওয়ার্ক (Decentralized Network)

বিকেন্দ্রীভূত নেটওয়ার্ক হলো এমন একটি সিস্টেম যেখানে কোনো কেন্দ্রীয় সার্ভার বা কর্তৃপক্ষ থাকে না। ব্লকচেইন নেটওয়ার্কে হাজারো কম্পিউটার (নোড) সমানভাবে তথ্য রাখে ও যাচাই করে। এতে তথ্য নিরাপদ থাকে কারণ কোনো একক দিক থেকে সিস্টেমে আক্রমণ বা ত্রুটি ঘটানো কঠিন। এই ধরণের নেটওয়ার্ক স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা বাড়ায় এবং মধ্যস্থতাকারীদের প্রয়োজনীয়তা কমায়।

ব্লকচেইন নোড (Blockchain Node)

ব্লকচেইন নোড হলো সেই কম্পিউটার বা সার্ভার যা ব্লকচেইন নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত থাকে এবং লেজারের সম্পূর্ণ বা আংশিক কপি সংরক্ষণ করে। নোডগুলো নতুন লেনদেন যাচাই করে ব্লক তৈরি ও প্রমাণীকরণে অংশ নেয়। নোডের মাধ্যমে ব্লকচেইন সিস্টেম বিকেন্দ্রীভূত ও নিরাপদ থাকে কারণ একাধিক নোড একই তথ্য যাচাই করে।

ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ব্লকচেইন সম্পর্ক

ক্রিপ্টোকারেন্সি হলো ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি ডিজিটাল বা ভার্চুয়াল মুদ্রা। বিটকয়েন, ইথেরিয়াম ইত্যাদি জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি। ব্লকচেইন হচ্ছে সেই প্রযুক্তি যার মাধ্যমে ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেন রেকর্ড ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। ব্লকচেইনের মাধ্যমে কোনো মধ্যস্থতাকারী ছাড়াই পিয়ার-টু-পিয়ার লেনদেন সম্ভব হয়, যা দ্রুত, সাশ্রয়ী এবং নিরাপদ।

স্মার্ট কন্ট্রাক্টস (Smart Contracts)

স্মার্ট কন্ট্রাক্টস হলো ব্লকচেইনে লেখা স্বয়ংক্রিয় প্রোগ্রাম যা নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ হলে নিজেই কার্যকর হয়। এর মাধ্যমে মধ্যস্থতাকারী ছাড়া চুক্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন হয়। উদাহরণস্বরূপ, ইথেরিয়াম ব্লকচেইনে স্মার্ট কন্ট্রাক্ট ব্যবহার করে বিভিন্ন ডিফাই অ্যাপ্লিকেশন তৈরি হয়েছে, যা আর্থিক লেনদেন, আইডেন্টিটি যাচাই এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছে।

ব্লকচেইন প্রযুক্তি ও ক্রিপ্টোকারেন্সি

ব্লকচেইন প্রযুক্তি হলো একটি নিরাপদ, বিকেন্দ্রীকৃত লেজার সিস্টেম, যা ক্রিপ্টোকারেন্সির ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। ক্রিপ্টোকারেন্সি হলো ডিজিটাল মুদ্রা, যেমন বিটকয়েন, যা ব্লকচেইনের মাধ্যমে লেনদেন ও সুরক্ষিত হয়। ব্লকচেইন প্রযুক্তির কারণে ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেন হয় দ্রুত, স্বচ্ছ এবং মধ্যস্থতাকারী ছাড়া, যা আর্থিক বিশ্বে বিপ্লব ঘটিয়েছে।

ব্লকচেইন এর প্রভাব ব্যবসায়

ব্লকচেইন ব্যবসায় বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন এনেছে। এটি সরবরাহ চেইনে স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা বাড়িয়েছে, লেনদেনের খরচ কমিয়েছে এবং তথ্য প্রমাণীকরণ সহজ করেছে। ব্যবসায়িক চুক্তি স্বয়ংক্রিয় করতে স্মার্ট কন্ট্রাক্টস ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়াও, ব্লকচেইন ভিত্তিক পেমেন্ট সিস্টেম দ্রুত এবং কম খরচে লেনদেন নিশ্চিত করছে, যা ব্যবসার কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।

ব্লকচেইন এবং ফিনটেক

ফিনটেক বা ফাইনান্সিয়াল টেকনোলজি খাতে ব্লকচেইন প্রযুক্তির প্রভাব অসাধারণ। ব্লকচেইন ব্যাংকিং, ঋণ প্রদান, পেমেন্ট প্রসেসিং, এবং কাস্টমার ভেরিফিকেশনে বিপ্লব ঘটাচ্ছে। বিকেন্দ্রীকৃত আর্থিক সেবা (DeFi) প্ল্যাটফর্মগুলি ব্লকচেইন ব্যবহার করে ব্যবহারকারীদের সরাসরি লেনদেন ও বিনিয়োগের সুযোগ দেয়, যা ফিনটেক খাতকে আরও গতিশীল ও স্বচ্ছ করে তুলেছে।

NFT ও ব্লকচেইন

NFT (Non-Fungible Token) হলো ব্লকচেইন ভিত্তিক ডিজিটাল অ্যাসেট, যা শিল্পকর্ম, সঙ্গীত, ভিডিও ও গেমিংয়ের মালিকানা প্রমাণ করে। প্রতিটি NFT একক এবং অনন্য, যা ব্লকচেইনের অপরিবর্তনীয় লেজারে সংরক্ষিত থাকে। NFT মার্কেট প্লেসগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতারা সহজেই ডিজিটাল মালিকানা লেনদেন করতে পারেন, যা শিল্প ও বিনোদন খাতে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।

ব্লকচেইন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

ব্লকচেইন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) সমন্বয় আধুনিক প্রযুক্তিতে এক নতুন দিগন্ত। ব্লকচেইন ডেটার নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে, যেখানে AI সেই ডেটা বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যবহৃত হয়। এই যুগলবন্দি প্রযুক্তি স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট সিটি, আর্থিক সেবা, এবং অটোমেশনসহ বিভিন্ন খাতে উন্নত সেবা প্রদান করছে।

ব্লকচেইন সম্পর্কে জনপ্রিয় প্রশ্ন ও উত্তর

১. ব্লকচেইন কি?

ব্লকচেইন হলো একটি ডিজিটাল লেজার সিস্টেম যা বিকেন্দ্রীকৃত নেটওয়ার্কে তথ্য ব্লক আকারে সংরক্ষণ করে। একবার তথ্য যোগ করলে তা পরিবর্তন করা খুব কঠিন হয়, যা নিরাপদ ও স্বচ্ছ লেনদেন নিশ্চিত করে।

২. ব্লকচেইন প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে?

ব্লকচেইনে তথ্য ব্লক আকারে সংরক্ষণ হয় এবং প্রতিটি ব্লক আগের ব্লকের সঙ্গে ক্রিপ্টোগ্রাফিক হ্যাশ দ্বারা যুক্ত থাকে। নেটওয়ার্কের সব নোড এই তথ্য যাচাই করে এবং সম্মতি পেলে নতুন ব্লক যুক্ত হয়।

৩. ব্লকচেইনের প্রধান সুবিধা কী কী?

ব্লকচেইনের প্রধান সুবিধা হলো বিকেন্দ্রীকরণ, উচ্চ নিরাপত্তা, স্বচ্ছতা, অপরিবর্তনযোগ্যতা, এবং দ্রুত ও কম খরচে লেনদেন করা।

৪. ব্লকচেইন কি নিরাপদ?

হ্যাঁ, ব্লকচেইন অত্যন্ত নিরাপদ কারণ এটি ক্রিপ্টোগ্রাফি ব্যবহার করে তথ্য সুরক্ষিত রাখে এবং বিকেন্দ্রীকৃত নেটওয়ার্কের কারণে কোনো একক পক্ষকে পুরো সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করতে দেয় না।

৫. ব্লকচেইন প্রযুক্তি কোথায় ব্যবহার হয়?

ক্রিপ্টোকারেন্সি, ব্যাংকিং, সরবরাহ চেইন, ভোটিং সিস্টেম, স্বাস্থ্য খাত, স্মার্ট কন্ট্রাক্টস, ডিজিটাল আইডেন্টিটি ও NFT মার্কেটে ব্লকচেইন ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে।

৬. ব্লকচেইন এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির মধ্যে কি সম্পর্ক?

ক্রিপ্টোকারেন্সি হলো ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি ডিজিটাল মুদ্রা। ব্লকচেইন লেনদেন রেকর্ড ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, যা ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল ভিত্তি।

৭. স্মার্ট কন্ট্রাক্টস কী?

স্মার্ট কন্ট্রাক্টস হলো স্বয়ংক্রিয় প্রোগ্রাম যা ব্লকচেইনে লেখা থাকে এবং নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ হলে নিজেই কার্যকর হয়, মধ্যস্থতাকারী ছাড়াই চুক্তি সম্পন্ন হয়।

৮. ব্লকচেইন প্রযুক্তি কবে থেকে শুরু হয়েছে?

ব্লকচেইনের ধারণা প্রথম প্রকাশ পায় ২০০৮ সালে সতোশি নাকামোতোর বিটকয়েন হোয়াইটপেপারে। এরপর থেকে এটি বিকাশ লাভ করে।

৯. বাংলাদেশে ব্লকচেইন প্রযুক্তির অবস্থা কেমন?

বাংলাদেশে ব্লকচেইন গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে, সরকারি ও বেসরকারি খাতে গবেষণা ও প্রজেক্ট চলছে। তবে আইনি ও প্রযুক্তিগত কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

১০. ব্লকচেইন প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ কি?

ব্লকচেইন ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত খাতে ব্যবহার হবে, যেমন DeFi, সরকারি সেবা, স্বাস্থ্য, NFT, IoT ইত্যাদি, এবং এর সঙ্গে AI ও অন্যান্য প্রযুক্তির সংমিশ্রণ ঘটবে।

উপসংহার

আজকের ডিজিটাল বিশ্বের জন্য ব্লকচেইন কি এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে বোঝা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ব্লকচেইন শুধু একটি প্রযুক্তি নয়, এটি তথ্য নিরাপত্তা, স্বচ্ছতা এবং বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে নানা ক্ষেত্রেই পরিবর্তন আনছে। এর ব্যবহার ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে শুরু করে সরকারি সেবা, স্বাস্থ্যখাত এবং ব্যবসায়িক লেনদেন পর্যন্ত বিস্তৃত। তাই যারা এই যুগে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেতে চান, তাদের জন্য ব্লকচেইনের মৌলিক ধারণা ও কাজের পদ্ধতি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি। আশা করি, এই পোস্টের মাধ্যমে আপনি ব্লকচেইন কি এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে তা সহজভাবে বুঝতে পেরেছেন।

আপনি কি ব্লকচেইন সম্পর্কে আরও জানতে চান? আজই আমাদের নিউজলেটারে সাবস্ক্রাইব করুন এবং নতুন প্রযুক্তি ও আপডেট পেয়ে যান সরাসরি আপনার ইনবক্সে! কমেন্ট করে আপনার প্রশ্ন শেয়ার করতে ভুলবেন না।

সতর্কীকরণ বার্তা

এই পোস্টে দেওয়া তথ্য শুধুমাত্র সাধারণ জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। ব্লকচেইন কি এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে সম্পর্কিত বিষয়গুলো সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হতে পারে এবং বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। বিনিয়োগ বা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নেওয়া উচিত। লেখক বা প্রকাশক কোনোভাবেই এই তথ্যের কারণে সৃষ্ট ক্ষতির দায়ভার গ্রহণ করবে না।

লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 

গুগল নিউজে Multiseen সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন

প্রয়োজনীয় আরো পোস্ট সমূহ:-

ন্যানো টেকনোলজি কি ও এর সুবিধা ও ব্যবহার বিস্তারিত

কম্পিউটার কেনার আগে জেনে নিন: সেরা কনফিগারেশন ও টিপস

কম্পিউটার কেনার আগে জেনে নিন

২০২৫ সালের সেরা ফ্রি অ্যান্টিভাইরাস

Xiaomi Poco M7 Plus Specifications: বাজেটের সেরা ফোনের পূর্ণ বিবরণ

Apple iphone 17 Pro Specifications নতুন যুগের স্মার্টফোন

Genie 3 AI রিভিউ: আধুনিক AI প্রযুক্তির সম্পূর্ণ গাইড

Xiaomi Redmi 15 – Full specifications ও ফিচার রিভিউ

Apple iPhone 17 Pro Max Release Date ও ফিচার জানুন

Samsung Galaxy A17 5G Specifications: বাজেট 5G ফোনের সম্পূর্ণ রিভিউ

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। আমি আমির হোসাইন, পেশায় একজন চাকরিজীবী এবং এই ওয়েবসাইটের এডমিন। চাকরির পাশাপাশি গত ১ বছর ধরে আমি আমার নিজস্ব ওয়েবসাইটে নিয়মিত লেখালেখি করছি এবং নিজস্ব ইউটিউব ও ফেসবুক প্ল্যাটফর্মে কন্টেন্ট তৈরি করছি। বিশেষ দ্রষ্টব্য: আমার লেখায় যদি কোনও ভুল থেকে থাকে, অনুগ্রহ করে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।

Leave a Reply