ইসলামিকভাবে দিন শুরু করার ১০টি সুন্নত: সঠিক নিয়ম ও বরকতময় সকাল কাটানোর উপায়

সকাল শুরু হোক সুন্নতের আলোয়, যেন পুরো দিন জুড়েই থাকে বরকত আর প্রশান্তি।

ইসলামে প্রতিটি কাজের শুরুতেই রয়েছে কিছু নির্দিষ্ট আদব ও সুন্নত। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে যদি রাসূল (সা.)-এর জীবনাদর্শ অনুসরণ করা হয়, তাহলে তা শুধু দুনিয়ার শান্তি নয়, আখিরাতেও সফলতার কারণ হতে পারে। আজকের এই ব্লগে আমরা আলোচনা করবো কীভাবে ইসলামিকভাবে দিন শুরু করার ১০টি সুন্নত পালন করে আপনি দিনটিকে বরকতময় ও ফলপ্রসূ করে তুলতে পারেন।

ইসলামিকভাবে দিন শুরু করার ১০টি সুন্নত

১. ফজরের পূর্বে ঘুম থেকে উঠা

রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“হে আল্লাহ, আমার উম্মাহর সকালকে বরকতময় করে দাও।” (তিরমিযি)

ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠা শুধু সুন্নত নয়, এটি স্বাস্থ্য ও প্রোডাক্টিভিটির জন্যও উপকারী। ফজরের পূর্বে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া এবং কুরআন তিলাওয়াত করার মাধ্যমে আত্মিক প্রশান্তি লাভ করা যায়।

সূত্র

২. ঘুম থেকে উঠেই দোয়া পড়া

ঘুম থেকে উঠেই রাসূল (সাঃ) এই দোয়া পড়তেন:

“আলহামদু লিল্লাহিল্লাযি আহইয়ানা বা’দা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশূর।”
(সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের মৃত্যুর পর আবার জীবন দিয়েছেন, আর তাঁর দিকেই আমাদের প্রত্যাবর্তন।)

এটি আপনাকে সারা দিন আল্লাহর স্মরণে রাখবে।

৩. মিসওয়াক ব্যবহার

ঘুম থেকে উঠে মুখ পরিষ্কার করা সুন্নত। রাসূল (সা.) প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই মিসওয়াক ব্যবহার করতেন। এতে শুধু পবিত্রতা নয়, ফজরের নামাজের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা হয়।

৪. ওযু করে ফজরের নামাজ আদায় করা

ফজরের নামাজ দিনের প্রথম ফরজ নামাজ। আল্লাহ তা’আলা কুরআনে বলেন:

“আর ফজরের নামায তো সাক্ষ্যপূর্ণ।” (সূরা আল-ইসরা, ১৭:৭৮)

রাসূল (সা.) বলেন:


“যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করে, সে আল্লাহর জিম্মায় থাকে।”
📖 সহীহ মুসলিম, হাদীস: ৬৫৭

✅ উপকারিতা:

  • দিন শুরু হয় আল্লাহর সন্তুষ্টির মাধ্যমে
  • আত্মা হয় প্রশান্ত
  • মেজাজ থাকে নিয়ন্ত্রিত

ফজরের নামাজ মুসলমানের জন্য এক বিশাল নিয়ামত। এই নামাজ শুধু আত্মার প্রশান্তি নয়, শরীরের জন্যও উপকারী। রাসূল (সা.) বলেছেন,
“ফজরের দুই রাকাত সুন্নাহ দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম।” (মুসলিম)

৫. ফজরের পর আল্লাহর জিকির ও কুরআন তিলাওয়াত

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ফজরের পর সূর্য ওঠা পর্যন্ত মসজিদে বসে জিকির ও কুরআন তিলাওয়াত করতেন। এর ফজিলত অনেক বড়।

সূত্র

৬. ফজরের পর সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত বসে থাকা

এটা সুন্নাহ এবং এতে রয়েছে একটি হজ ও উমরাহর সমতুল্য সওয়াব। যারা পারেন, তারা এই আমলটি নিয়মিত করলে দুনিয়া ও আখিরাতে লাভবান হবেন।

৭. সকালের দোয়া ও মাসনুন জিকির

নিচের দোয়াগুলো সকালে পড়া উত্তম:

  • আয়াতুল কুরসি (সূরা বাকারাঃ ২৫৫)
  • সূরা ইখলাস, ফালাক, নাস (৩ বার)
  • “আসবাহনা ও আসবাহাল মুলকু লিল্লাহ…” ইত্যাদি দোয়াগুলো পড়া উত্তম।

বিশ্বস্ত রিসোর্স

৮. বাড়ির লোকজনকে সালাম দেওয়া ও উত্তম ব্যবহার

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে পরিবারের সদস্যদেরকে সালাম দেওয়া, মিষ্টি ব্যবহার করা এবং উত্তম আচরণ করা একটি ইসলামিক সামাজিক সুন্নত। এতে সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়।

৯. কাজ শুরু করার আগে বিসমিল্লাহ বলা

সকালে যেকোনো কাজ শুরু করার আগে “বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম” বলা সুন্নত। এতে কাজের বরকত বাড়ে এবং শয়তানের প্রভাব কমে।

১০. হালাল উপার্জনের নিয়তে ঘর থেকে বের হওয়া

রাসূল (সা.) দোয়া পড়তেন:
“হে আল্লাহ! আমার জন্য আমার জীবিকা সহজ করে দাও।”

📘 বুখারী, হাদীস: ২০৭৬

দিনের শুরুতে হালাল রিজিকের নিয়তে বের হওয়া একটা বড় নেকি এবং সুন্নত।

প্রশ্নোত্তর ইসলামিকভাবে দিন শুরু করার ১০টি সুন্নত সম্পর্কিত 

প্রশ্ন: ইসলামিকভাবে দিন শুরু করা কেন জরুরি?

উত্তর:  ইসলামিক রীতিতে দিন শুরু করলে বরকত হয়, গোনাহ কমে, মানসিক প্রশান্তি আসে।

প্রশ্ন: সকাল বেলায় কোন দোয়াগুলো পড়া সুন্নত?

উত্তর: ঘুম থেকে ওঠার দোয়া, ওজুর দোয়া, ঘর থেকে বের হওয়ার দোয়া ইত্যাদি।

প্রশ্ন: ইসলামিক মর্নিং রুটিনে কি খাবার খাওয়া উচিত?

উত্তর: সুন্নত অনুযায়ী খেজুর, পানি, মধু, কালিজিরা ইত্যাদি।

প্রশ্ন: রাসূল (সা.) দিনের শুরুতে কী করতেন?

উত্তর: ফজরের নামাজ, যিকির, কুরআন তিলাওয়াত ও হালাল জীবিকা অন্বেষণ।

 

প্রশ্ন: ইসলামিকভাবে দিন শুরু করার কেন এত গুরুত্ব?

উত্তর: ইসলামিক দৃষ্টিকোণে দিনের শুরুতে সুন্নাহ পালন করলে তা সারা দিনের কাজে বরকত আনে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হয়।

প্রশ্ন: আমি যদি সব ১০টি সুন্নত পালন করতে না পারি?

উত্তর: অন্তত যেগুলো আপনার জন্য সহজ, সেগুলো দিয়ে শুরু করুন। ধীরে ধীরে অভ্যাস গড়ে তুলুন।

প্রশ্ন: ফজরের পর ঘুমানো কি ইসলামিকভাবে নিষিদ্ধ?

উত্তর: নয়, তবে ফজরের পর কিছু সময় আল্লাহর জিকির ও কাজের উদ্দেশ্যে প্রস্তুতি নেওয়া উত্তম এবং এটি রাসূল (সাঃ)-এর অভ্যাস ছিল।

প্রশ্ন:১০০০ সুন্নত বলতে কী বোঝায়?

উত্তর:
“১০০০ সুন্নত” বলতে বোঝানো হয় রাসূল (সা.)-এর জীবনের বিভিন্ন দিক থেকে সংগৃহীত ছোট-বড় অসংখ্য সুন্নত, যেগুলো ব্যক্তি, সমাজ ও পারিবারিক জীবনে অনুসরণযোগ্য। যেমন: কথা বলার ধরন, খাওয়ার নিয়ম, ঘুমানো, ওঠা-বসা, পোশাক পরা ইত্যাদি।

প্রশ্ন: নবীজির সুন্নত সমূহ PDF কোথায় পাওয়া যাবে?

উত্তর:
নবীজির জীবনী ও সুন্নাহসমূহ নিয়ে অনেক পিডিএফ বই অনলাইনে পাওয়া যায়। আপনি চাইলে এই বিশ্বস্ত সাইটগুলো থেকে ডাউনলোড করতে পারেন:

🔗 Islamic PDF Book Archive – Sunnah Collections
🔗 আলোর পথে ইসলামিক বই

প্রশ্ন:দৈনন্দিন জীবনে রাসূলের (সাঃ) কোন কোন সুন্নতগুলো পালনযোগ্য?

উত্তর:
দৈনন্দিন জীবনে রাসূলের গুরুত্বপূর্ণ কিছু সুন্নত হলো:

  • ঘুম থেকে উঠেই দোয়া পড়া
  • মিসওয়াক ব্যবহার
  • ফজরের নামাজ
  • ডান দিক দিয়ে খাওয়া ও পরিধান
  • সালাম দেওয়া
  • ঘর থেকে বের হওয়ার দোয়া পড়া
  • রাগ নিয়ন্ত্রণ করা

এসব সুন্নত দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত।

প্রশ্ন: নবীর সুন্নত সমূহ নিয়ে কোন বই পড়া ভালো?

উত্তর:
বাংলা ভাষায় সবচেয়ে পরিচিত কিছু বই হলো:

  • “রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর ১০০০ সুন্নত” – ইসলামিক ফাউন্ডেশন
  • “সুন্নাহ কি ও কেন” – আবুল হাসান আলী নদভী
  • “সুন্নতের আলোকে জীবন” – ড. আবু আমির

আপনি চাইলে rokomari.com থেকে কিনতে পারেন।

প্রশ্ন: সুন্নত কাজগুলো কী কী?

উত্তর:
সুন্নত কাজ বলতে সেইসব কাজ বোঝায় যেগুলো নবী করিম (সা.) নিয়মিত করতেন এবং সাহাবীরা তা থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ:

  • নামাজের সুন্নত রাকাআত
  • খাবারের আগে ও পরে হাত ধোয়া
  • ডান হাত দিয়ে খাওয়া
  • জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়া
  • ভালো কথা বলা
  • অজু ও তায়াম্মুম

প্রশ্ন: খানা খাওয়ার সুন্নত কয়টি?

উত্তর:
খাওয়ার সময় রাসূল (সা.) যে সুন্নতগুলো অনুসরণ করতেন তা হলো প্রায় ১০টি, তার মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ হলো:

  1. বিসমিল্লাহ বলা
  2. ডান হাতে খাওয়া
  3. নিজের সামনে থেকে খাওয়া
  4. খাওয়ার পর আলহামদুলিল্লাহ বলা
  5. তিন আঙুলে খাওয়া
  6. খাবার পড়ে না ফেলা
  7. চুপচাপ খাওয়া
  8. পরিবারের সঙ্গে খাওয়া
  9. খাবারের প্রশংসা করা
  10. ধোয়া হাতে খাওয়া

প্রশ্ন: নবীজির সুন্নত কী কী?

উত্তর:
নবীজির জীবনে প্রতিটি কাজের মধ্যেই সুন্নত রয়েছে। এর মধ্যে কিছু সর্বজনবিদিত সুন্নত হলো:

  • সালাম দেওয়া
  • হাঁচি দিলে “আলহামদুলিল্লাহ” বলা
  • নামাজের আগে ওযু করা
  • মুসাফাহা করা
  • দান সদকা করা
  • পরস্পরের হক আদায় করা

প্রশ্ন: পানি খাওয়ার সুন্নত কয়টি?

উত্তর:
পানি খাওয়ার সুন্নত প্রায় ৭টি। যেমনঃ

  1. বসে বসে খাওয়া
  2. ডান হাতে খাওয়া
  3. “বিসমিল্লাহ” বলে খাওয়া
  4. তিনবারে খাওয়া
  5. পান করার সময় “আলহামদুলিল্লাহ” বলা
  6. সরাসরি মুঠো থেকে খাওয়া (গ্লাসে মুখ না লাগানো)
  7. অন্যকে আগে পানি দেওয়া

উপসংহারঃ

যে ব্যক্তি ইসলামিকভাবে দিন শুরু করার ১০টি সুন্নত নিয়মিত পালন করতে পারে, তার দিনটি শুধু বরকতময় হয় না, বরং আত্মিক প্রশান্তিও মেলে। এই সুন্নতগুলো প্রতিদিনের জীবনে বাস্তবায়নের মাধ্যমে একজন মুসলিম আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে এবং আখিরাতে উত্তম প্রতিদান পেতে পারে। আসুন আমরা সবাই চেষ্টা করি রাসূল (সা.)-এর আদর্শে জীবন গড়তে।

লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন

সতর্কীকরণ বার্তা

ধর্মীয় কনটেন্ট কেবলমাত্র সাধারণ ধর্মীয় জ্ঞানের ভিত্তিতে শেয়ার করা হয়েছে। এটি কোনো ফতোয়া বা বাধ্যতামূলক ধর্মীয় নির্দেশ নয়। দ্বীনি বিষয়ে নিশ্চিত হতে ইসলামিক স্কলার বা আলেমের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। আমি আমির হোসাইন, পেশায় একজন চাকরিজীবী এবং এই ওয়েবসাইটের এডমিন। চাকরির পাশাপাশি গত ১ বছর ধরে আমি আমার নিজস্ব ওয়েবসাইটে নিয়মিত লেখালেখি করছি এবং নিজস্ব ইউটিউব ও ফেসবুক প্ল্যাটফর্মে কন্টেন্ট তৈরি করছি। বিশেষ দ্রষ্টব্য: আমার লেখায় যদি কোনও ভুল থেকে থাকে, অনুগ্রহ করে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।

Leave a Reply