কম্পিউটার ভাইরাস কি কি ক্ষতি করে জানেন? আপনার ডাটা ও সিস্টেমকে রক্ষা করতে আজই সচেতন হোন!
আজকের ডিজিটাল যুগে কম্পিউটার আমাদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের অপরিহার্য অংশ। কিন্তু যতই আমরা প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল হচ্ছি, ততই সাইবার অপরাধী ও হ্যাকাররা নতুন নতুন কৌশল বের করছে আমাদের ডিভাইস, ডাটা ও ব্যক্তিগত তথ্যের ক্ষতি করার জন্য। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত ও ক্ষতিকর এক ধরনের হুমকি হলো কম্পিউটার ভাইরাস।
অনেকেই মনে করেন ভাইরাস শুধু কম্পিউটারকে ধীর করে দেয়, কিন্তু বাস্তবে এর প্রভাব অনেক গভীর এবং মারাত্মক হতে পারে। ডাটা চুরি, ফাইল নষ্ট হয়ে যাওয়া, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য চুরি, এমনকি পুরো সিস্টেমকে জিম্মি করে অর্থ আদায় করা — সবই সম্ভব ভাইরাসের মাধ্যমে। তাই “কম্পিউটার ভাইরাস কি কি ক্ষতি করে” এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানা আমাদের ডিজিটাল সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত জরুরি।
পোস্ট সূচীপত্র
Toggleকম্পিউটার ভাইরাস কী?
কম্পিউটার ভাইরাস হলো একটি ক্ষতিকর সফটওয়্যার প্রোগ্রাম যা নিজের কপি তৈরি করে কম্পিউটারের বিভিন্ন ফাইল ও সিস্টেমে ছড়িয়ে পড়ে। এটি সাধারণত ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই কাজ করে এবং ডাটা নষ্ট করা, সিস্টেম ধীর করা, ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করা বা কম্পিউটারকে অকার্যকর করে ফেলার মতো ক্ষতি করে। ভাইরাসের উদ্দেশ্য হতে পারে মজা করা, অর্থনৈতিক লাভ অথবা তথ্য চুরি।
কম্পিউটার কাকে বলে?
কম্পিউটার হলো একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যা ইনপুট হিসেবে দেওয়া ডেটা প্রক্রিয়াকরণ করে আউটপুট তৈরি করে। এটি দ্রুত এবং সঠিকভাবে গণনা, তথ্য সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ ও প্রদর্শন করতে পারে। সাধারণত, কম্পিউটার হার্ডওয়্যার (যেমন প্রসেসর, মেমোরি) এবং সফটওয়্যার (প্রোগ্রাম) নিয়ে গঠিত।
দৈনন্দিন জীবনে কম্পিউটার ব্যবহৃত হয় তথ্যসংগ্রহ, যোগাযোগ, শিক্ষা, ব্যবসা, বিনোদন এবং নানা কাজ দ্রুত ও সহজ করতে।
কম্পিউটার ভাইরাস কত প্রকার ও কি কি?
কম্পিউটার ভাইরাস বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। প্রধান প্রধান ভাইরাসের প্রকারভেদ ও তাদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নিচে দেওয়া হলো—
১. ফাইল ইনফেক্টর ভাইরাস (File Infector Virus)
এই ভাইরাস মূলত এক্সিকিউটেবল (.exe বা .com) ফাইলগুলোতে সংক্রমণ করে এবং ওই ফাইল চালু হলে ভাইরাস সক্রিয় হয়।
২. ম্যাক্রো ভাইরাস (Macro Virus)
মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল বা অন্য অ্যাপ্লিকেশনের ম্যাক্রো ফাংশনের মাধ্যমে ছড়ায়। সাধারণত ডকুমেন্ট ফাইলের মধ্যে লুকিয়ে থাকে।
৩. বুট সেক্টর ভাইরাস (Boot Sector Virus)
কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক বা ফ্লপি ডিস্কের বুট সেক্টরকে ইনফেক্ট করে। কম্পিউটার চালু হওয়ার সময় সক্রিয় হয়ে সিস্টেমে প্রবেশ করে।
৪. রুটকিট (Rootkit)
সিস্টেমের গভীরে ঢুকে নিজেকে লুকিয়ে রাখে এবং ব্যবহারকারীকে অসচেতন রাখে। অনেক সময় ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার রুটকিটের সঙ্গে যুক্ত থাকে।
৫. ওয়ার্ম (Worm)
নিজে নিজে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং অন্য কম্পিউটারে সংক্রমণ ছড়ায়, সাধারণত কোনো ফাইলের সাহায্য ছাড়াই।
৬. ট্রোজান হর্স (Trojan Horse)
নিজেকে ভুয়া সফটওয়্যার হিসেবে উপস্থাপন করে কম্পিউটারে ঢুকে ক্ষতি করে। এটি সরাসরি নিজে ছড়ায় না, কিন্তু অন্যান্য ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার আনতে পারে।
৭. র্যানসমওয়্যার (Ransomware)
কম্পিউটারের ফাইলগুলোকে এনক্রিপ্ট করে লক করে দেয় এবং মুক্তিপণ দাবি করে।
কম্পিউটার ভাইরাস কী এবং কেন এটি বিপজ্জনক
কম্পিউটার ভাইরাস হলো এক ধরনের ম্যালওয়্যার (Malicious Software) যা আপনার অনুমতি ছাড়াই সিস্টেমে প্রবেশ করে এবং নিজেকে কপি করে ছড়িয়ে দেয়। সাধারণত এটি ফাইল, ইমেইল অ্যাটাচমেন্ট, সফটওয়্যার ইনস্টলেশন বা ইন্টারনেট ডাউনলোডের মাধ্যমে প্রবেশ করে।
🔹 বিপজ্জনক হওয়ার কারণ:
- এটি আপনার গুরুত্বপূর্ণ ডাটা নষ্ট করে দিতে পারে
- সিস্টেমকে অচল করে দিতে পারে
- ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতে পারে
- নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য ডিভাইসকেও আক্রান্ত করতে পারে
📖 বিশ্বস্ত সোর্স: Microsoft – What is a computer virus?
কম্পিউটার ভাইরাসের ইতিহাস ও বিবর্তন
কম্পিউটার ভাইরাসের ধারণা প্রথম আসে ১৯৭০-এর দশকের শেষ দিকে, তবে প্রথম বড় আকারে ভাইরাস দেখা যায় ১৯৮৬ সালে, যার নাম ছিল Brain Virus। তখন এটি মূলত ফ্লপি ডিস্কের মাধ্যমে ছড়াতো।
১৯৯০-এর দশকে ইন্টারনেট জনপ্রিয় হওয়ার পর ভাইরাস আরও দ্রুত ছড়াতে শুরু করে। ILOVEYOU Virus (২০০০ সাল) ইমেইলের মাধ্যমে সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ কম্পিউটারকে আক্রান্ত করে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করেছিল।
এখনকার ভাইরাসগুলো শুধু ধ্বংসাত্মক নয়, বরং বুদ্ধিমানও। এগুলো আপনার ব্যক্তিগত ও আর্থিক তথ্য চুরি করে, ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইন করে, এমনকি আপনাকে অজান্তেই হ্যাকারদের জন্য “বট” হিসেবে কাজ করাতে পারে।
কম্পিউটার ভাইরাস কি কি ক্ষতি করে — প্রধান প্রভাবসমূহ
১. ডাটা নষ্ট হয়ে যাওয়া (Data Corruption)
কম্পিউটার ভাইরাসের অন্যতম প্রধান ক্ষতি হলো আপনার ব্যক্তিগত বা গুরুত্বপূর্ণ ডাটাকে নষ্ট করে দেওয়া। ভাইরাস সিস্টেমের ফাইলগুলো পরিবর্তন করে, ফাইল ফরম্যাট ভেঙে দেয় বা পুরোপুরি মুছে ফেলে।
উদাহরণস্বরূপ, ২০১৭ সালের NotPetya Virus হাজার হাজার কোম্পানির ডাটা মুছে ফেলে এবং কিছুক্ষেত্রে ডাটা রিকভার করাও অসম্ভব করে দেয়।
📖 রেফারেন্স: Symantec – What is Data Corruption
২. ব্যক্তিগত তথ্য চুরি (Identity Theft)
অনেক ভাইরাস আপনার অজান্তেই কম্পিউটার থেকে ব্যক্তিগত তথ্য যেমন—
- নাম
- ঠিকানা
- জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর
- ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও ক্রেডিট কার্ড তথ্য
চুরি করে হ্যাকারদের কাছে পাঠায়।
এই তথ্য পরে জালিয়াতি, অনলাইন শপিং, এমনকি আপনার নামে অপরাধ করার জন্য ব্যবহার করা হতে পারে।
📖 রেফারেন্স: Federal Trade Commission – Identity Theft
৩. সিস্টেম পারফরম্যান্স কমে যাওয়া
ভাইরাস সিস্টেমের RAM, CPU এবং হার্ডডিস্ক অতিরিক্ত ব্যবহার করে, যার ফলে কম্পিউটার ধীরে চলে।
আপনি লক্ষ্য করতে পারেন—
- অ্যাপ্লিকেশন খোলার সময় বেশি লাগছে
- হঠাৎ হ্যাং হয়ে যাচ্ছে
- ফ্যানের শব্দ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে
📖 রেফারেন্স: Microsoft Support – Slow PC?
৪. অননুমোদিত অ্যাক্সেস (Unauthorized Access)
কিছু ভাইরাস হ্যাকারদের আপনার সিস্টেমে রিমোট অ্যাক্সেস দিয়ে দেয়।
এর মানে হলো, হ্যাকার আপনার স্ক্রিন দেখতে পারে, আপনার কিবোর্ডের কীস্ট্রোক রেকর্ড করতে পারে (Keylogging), এমনকি আপনার ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন চালু করতে পারে।
এটি আপনার ব্যক্তিগত গোপনীয়তার জন্য মারাত্মক হুমকি।
📖 রেফারেন্স: Kaspersky – Keylogger Threats
৫. র্যানসমওয়্যার আক্রমণ (Ransomware Attack)
এটি এমন এক ধরনের ভাইরাস যা আপনার ডাটা এনক্রিপ্ট করে লক করে দেয় এবং তারপর মুক্তিপণ দাবি করে।
সবচেয়ে পরিচিত উদাহরণ হলো WannaCry Ransomware (2017), যা ১৫০টিরও বেশি দেশে প্রায় ২ লাখ কম্পিউটারকে আক্রান্ত করেছিল এবং হাসপাতাল, ব্যাংকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সেবা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
📖 রেফারেন্স: Europol – WannaCry Ransomware Attack
৬. নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে পড়া (Network Propagation)
অনেক ভাইরাস শুধু আপনার কম্পিউটারকেই নয়, বরং আপনার সাথে যুক্ত পুরো নেটওয়ার্ককে আক্রান্ত করতে পারে।
একবার একটি ডিভাইস আক্রান্ত হলে একই নেটওয়ার্কে থাকা অন্য কম্পিউটার, সার্ভার এমনকি প্রিন্টার পর্যন্ত আক্রান্ত হতে পারে।
এটি বিশেষ করে কর্পোরেট নেটওয়ার্কে মারাত্মক সমস্যা তৈরি করে।
📖 রেফারেন্স: Cisco – Malware Propagation
কম্পিউটার ভাইরাসের সাধারণ লক্ষণ
কম্পিউটার ভাইরাস সাধারণত চুপিসারে সিস্টেমে প্রবেশ করে এবং ধীরে ধীরে তার ক্ষতিকর কাজ শুরু করে। তবে কিছু স্পষ্ট লক্ষণ থাকে, যেগুলো আপনার নজরে আসলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। নিচে সেই লক্ষণগুলো উল্লেখ করা হলো—
১. কম্পিউটার ধীর হয়ে যাওয়া
যদি আপনার কম্পিউটার আগে দ্রুত কাজ করত কিন্তু হঠাৎ খুব ধীর হয়ে যায়, তাহলে এটি ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে। ভাইরাস আপনার CPU, RAM এবং হার্ডডিস্ক রিসোর্স বেশি ব্যবহার করে, যার ফলে সিস্টেমের পারফরম্যান্স নেমে যায়।
📖 রেফারেন্স: Microsoft – Reasons your PC is slow
২. অজানা পপ-আপ বিজ্ঞাপন (Unexpected Pop-ups)
ভাইরাস বা অ্যাডওয়্যার (Adware) আপনার স্ক্রিনে অজানা পপ-আপ বিজ্ঞাপন দেখাতে পারে, এমনকি আপনি ইন্টারনেটে সংযুক্ত না থাকলেও। এগুলো সাধারণত আপনাকে অবিশ্বস্ত ওয়েবসাইটে নিয়ে যেতে বা ম্যালওয়্যার ডাউনলোড করাতে প্রলুব্ধ করে।
📖 রেফারেন্স: Kaspersky – Adware Threats
৩. ফাইল হঠাৎ মুছে যাওয়া বা খুলতে না পারা
ভাইরাস আক্রান্ত হলে আপনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইল হঠাৎ মুছে যেতে পারে অথবা সেগুলো খুলতে গেলে এরর দেখাতে পারে। র্যানসমওয়্যার হলে ফাইলের এক্সটেনশন পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে এবং একটি নোট দেখা যাবে যেখানে মুক্তিপণ চাওয়া হবে।
📖 রেফারেন্স: Norton – Signs of Ransomware
৪. হঠাৎ রিস্টার্ট বা শাটডাউন হওয়া
যদি আপনার কম্পিউটার হঠাৎ নিজে নিজে রিস্টার্ট বা শাটডাউন হয়ে যায়, তবে সেটি ভাইরাসের কারণে হতে পারে। অনেক ভাইরাস সিস্টেমের ক্রিটিক্যাল ফাইল পরিবর্তন করে, যার ফলে সিস্টেম ক্র্যাশ হয়।
📖 রেফারেন্স: McAfee – Computer keeps restarting
৫. ইন্টারনেট ডাটা অস্বাভাবিকভাবে খরচ হওয়া
ভাইরাস বা ট্রোজান আপনার অজান্তে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে, যেমন—
- ব্যাকগ্রাউন্ডে ডাটা পাঠানো
- হ্যাকার সার্ভারের সাথে যোগাযোগ রাখা
- স্প্যাম ইমেইল পাঠানো
📖 রেফারেন্স: Cisco – Botnet Threats
৬. অচেনা প্রোগ্রাম বা আইকন দেখা যাওয়া
ভাইরাস আক্রান্ত হলে আপনার ডেস্কটপে নতুন অচেনা প্রোগ্রাম বা শর্টকাট তৈরি হতে পারে। অনেক সময় এগুলো আসল প্রোগ্রামের নাম নকল করে, যাতে আপনি বিভ্রান্ত হন।
ভাইরাস ছড়ানোর মাধ্যম
কম্পিউটার ভাইরাস খুব চতুরভাবে বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়ায়। অনেক সময় আমরা নিজেরাই অজান্তে সেই ভাইরাসকে আমাদের কম্পিউটারে আমন্ত্রণ জানাই। ভাইরাস ছড়ানোর সাধারণ কয়েকটি মাধ্যম নিচে দেওয়া হলো—
১. ইমেইল অ্যাটাচমেন্ট (Email Attachments)
ভাইরাস ছড়ানোর সবচেয়ে প্রচলিত উপায় হলো ইমেইল অ্যাটাচমেন্ট। অনেক সময় হ্যাকাররা নিজেকে পরিচিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মতো সাজিয়ে আপনাকে একটি ইমেইল পাঠায়, যেখানে একটি ফাইল অ্যাটাচ থাকে।
আপনি সেই ফাইল খুললেই ভাইরাস ইনস্টল হয়ে যায়।
উদাহরণ: ২০০০ সালের ILOVEYOU Virus ইমেইল অ্যাটাচমেন্টের মাধ্যমে ছড়িয়ে সারা বিশ্বে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করেছিল।
📖 রেফারেন্স: US-CERT – Email Attachments
২. অবিশ্বস্ত ওয়েবসাইট থেকে সফটওয়্যার ডাউনলোড
ফ্রি সফটওয়্যার, গেম, বা ক্র্যাকড প্রোগ্রাম ডাউনলোড করতে গিয়ে অনেক সময় ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া যায়। হ্যাকাররা এসব ফাইলে ম্যালওয়্যার ইনজেক্ট করে রাখে।
বিশেষ করে পাইরেটেড সফটওয়্যার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ এতে ম্যালওয়্যার থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
📖 রেফারেন্স: Kaspersky – Risks of Pirated Software
৩. ইউএসবি বা এক্সটার্নাল ডিভাইস
ভাইরাস অনেক সময় পেনড্রাইভ, এক্সটার্নাল হার্ডডিস্ক বা মেমোরি কার্ড এর মাধ্যমে ছড়ায়।
যদি আপনি কারও ইউএসবি আপনার কম্পিউটারে লাগান এবং সেটি ভাইরাসে আক্রান্ত থাকে, তাহলে অটোরান ফাইলের মাধ্যমে ভাইরাস সঙ্গে সঙ্গে ইনস্টল হয়ে যাবে।
📖 রেফারেন্স: Sophos – USB Threats
৪. সোশ্যাল মিডিয়া লিঙ্ক
ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াতে অচেনা লিঙ্কে ক্লিক করাও বিপজ্জনক। অনেক সময় এসব লিঙ্কে ক্লিক করলে একটি ফাইল ডাউনলোড হয় বা একটি ফেক ওয়েবসাইট খুলে যায়, যা ভাইরাস ইনস্টল করে দেয়।
📖 রেফারেন্স: Norton – Social Media Scams
৫. নেটওয়ার্ক শেয়ারিং (Network Sharing)
একই লোকাল নেটওয়ার্কে একাধিক কম্পিউটার যুক্ত থাকলে ভাইরাস একটি থেকে আরেকটিতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এই কারণে কর্পোরেট অফিস বা ইন্টারনেট ক্যাফেগুলোতে ভাইরাসের ঝুঁকি অনেক বেশি।
📖 রেফারেন্স: Cisco – Network Threats
ভাইরাস আক্রমণ থেকে কম্পিউটার সুরক্ষার উপায়
কম্পিউটার ভাইরাস প্রতিরোধ করা সবসময় সম্ভব, যদি আপনি কিছু নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলেন। নিচে গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপায় তুলে ধরা হলো—
১. নির্ভরযোগ্য অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করুন
ভাইরাস প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো ভালো মানের অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ইনস্টল করা।
যেমন:
- Kaspersky
- Bitdefender
- Norton
এই সফটওয়্যারগুলো রিয়েল-টাইম স্ক্যান চালিয়ে ভাইরাস, ম্যালওয়্যার, ট্রোজান, র্যানসমওয়্যার ইত্যাদি শনাক্ত করে এবং ব্লক করে দেয়।
২. অপারেটিং সিস্টেম ও সফটওয়্যার আপডেট রাখুন
অনেক ভাইরাস পুরনো সফটওয়্যারের সিকিউরিটি দুর্বলতা (Security Vulnerability) ব্যবহার করে সিস্টেমে প্রবেশ করে।
তাই Windows, macOS, Linux—যে সিস্টেমই ব্যবহার করুন না কেন, নিয়মিত আপডেট দিন।
📖 রেফারেন্স: Microsoft – Update your PC
৩. অবিশ্বস্ত লিঙ্ক ও অ্যাটাচমেন্ট এড়িয়ে চলুন
ইমেইল বা সোশ্যাল মিডিয়ার অচেনা লিঙ্ক ও ফাইল কখনোই খুলবেন না।
যদি কারও কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে হওয়া ফাইল পান, প্রথমে সেটি অ্যান্টিভাইরাস দিয়ে স্ক্যান করুন।
📖 রেফারেন্স: CISA – Recognizing Phishing
৪. ডাটা ব্যাকআপ রাখুন
ভাইরাস আক্রমণে আপনার ডাটা হারানোর ঝুঁকি থাকে। তাই নিয়মিত এক্সটার্নাল হার্ডডিস্ক বা ক্লাউড স্টোরেজ-এ ব্যাকআপ রাখুন।
জনপ্রিয় ক্লাউড সার্ভিস:
- Google Drive
- Dropbox
- OneDrive
৫. শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন
সহজ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করলে হ্যাকার সহজেই আপনার সিস্টেমে প্রবেশ করতে পারে।
একটি ভালো পাসওয়ার্ডে থাকা উচিত—
- বড় হাতের ও ছোট হাতের অক্ষর
- সংখ্যা
- বিশেষ চিহ্ন
📖 রেফারেন্স: NIST – Digital Identity Guidelines
৬. ফায়ারওয়াল সক্রিয় রাখুন
ফায়ারওয়াল (Firewall) নেটওয়ার্ক ট্রাফিক মনিটর করে এবং সন্দেহজনক সংযোগ ব্লক করে।
Windows ও macOS-এ বিল্ট-ইন ফায়ারওয়াল থাকে, যা সবসময় চালু রাখা উচিত।
📖 রেফারেন্স: Microsoft – Turn Windows Firewall on or off
৭. ইউএসবি ও এক্সটার্নাল ডিভাইস স্ক্যান করুন
যে কোনো ইউএসবি বা এক্সটার্নাল হার্ডডিস্ক ব্যবহারের আগে অ্যান্টিভাইরাস দিয়ে স্ক্যান করুন।
অনেক সময় অটো-রান ভাইরাস এভাবেই ছড়ায়।
📖 রেফারেন্স: Sophos – USB Device Security
ভাইরাস আক্রান্ত হলে করণীয়
আপনার কম্পিউটার ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে সন্দেহ হলে যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। দেরি করলে ভাইরাস আরও গভীরে ছড়িয়ে পড়বে এবং ডাটা হারানোর ঝুঁকি বাড়বে। নিচে ধাপে ধাপে করণীয় দেওয়া হলো—
১. ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করুন
ভাইরাস অনেক সময় ইন্টারনেট ব্যবহার করে হ্যাকারদের সাথে যোগাযোগ রাখে বা নেটওয়ার্কে অন্য ডিভাইসে ছড়িয়ে পড়ে।
সুতরাং প্রথম কাজ হলো ইন্টারনেট কানেকশন অফ করা (Wi-Fi বন্ধ করুন বা LAN কেবল খুলে ফেলুন)।
📖 রেফারেন্স: Kaspersky – Disconnect from Internet to stop malware
২. সেফ মোডে কম্পিউটার চালু করুন
Safe Mode-এ কম্পিউটার চালালে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় সিস্টেম ফাইল চালু হয়, ফলে ভাইরাস সক্রিয় থাকতে পারে না।
Windows-এ সেফ মোড চালু করতে:
- কম্পিউটার রিস্টার্ট করুন
- F8 বা Shift + F8 প্রেস করুন (নতুন সংস্করণে Advanced Startup Options থেকে)
📖 রেফারেন্স: Microsoft – Start your PC in safe mode
৩. সম্পূর্ণ সিস্টেম স্ক্যান চালান
বিশ্বস্ত অ্যান্টিভাইরাস বা অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার সফটওয়্যার দিয়ে ফুল সিস্টেম স্ক্যান চালান।
সুপারিশকৃত সফটওয়্যার:
- Malwarebytes
- Norton
- Bitdefender
৪. ভাইরাস কোয়ারেন্টাইন বা রিমুভ করুন
অ্যান্টিভাইরাস যদি ভাইরাস শনাক্ত করে, তবে সেটিকে Quarantine করুন বা সরাসরি Delete করে দিন। কোয়ারেন্টাইনে দিলে ভাইরাস সক্রিয় হতে পারবে না এবং পরে প্রয়োজন হলে মুছে ফেলা যাবে।
📖 রেফারেন্স: McAfee – Remove viruses from your PC
৫. গুরুত্বপূর্ণ ডাটা ব্যাকআপ নিন
ভাইরাস রিমুভ করার আগে বা পরে, আপনার গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলো এক্সটার্নাল হার্ডডিস্ক বা ক্লাউড স্টোরেজ-এ ব্যাকআপ করে রাখুন। তবে আক্রান্ত ফাইল ব্যাকআপ করবেন না, কারণ সেগুলো ভাইরাস আবার ফিরিয়ে আনতে পারে।
📖 রেফারেন্স: Google – How to back up files
৬. প্রয়োজনে অপারেটিং সিস্টেম রিইনস্টল করুন
যদি ভাইরাস খুব গভীরে প্রবেশ করে থাকে এবং রিমুভ করা সম্ভব না হয়, তাহলে Windows/macOS পুনরায় ইনস্টল করুন।
এটি সিস্টেমকে একেবারে পরিষ্কার করে ফেলবে এবং ভাইরাস পুরোপুরি মুছে যাবে।
📖 রেফারেন্স: Microsoft – How to reinstall Windows
৭. সিকিউরিটি প্যাচ ও আপডেট ইনস্টল করুন
ভাইরাস রিমুভের পর সিস্টেমে সর্বশেষ সিকিউরিটি আপডেট ইনস্টল করুন, যাতে ভবিষ্যতে একই ধরনের আক্রমণ ঠেকানো যায়।
📖 রেফারেন্স: NIST – Patch Management
জনপ্রিয় কিছু কম্পিউটার ভাইরাস ও তাদের ক্ষতি
কম্পিউটার ভাইরাসের ইতিহাসে কিছু ভাইরাস এমন আছে, যেগুলো শুধু ব্যক্তিগত কম্পিউটার নয়, বরং পুরো বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষতি করেছে। নিচে কিছু উল্লেখযোগ্য ভাইরাসের নাম ও তাদের প্রভাব তুলে ধরা হলো—
১. ILOVEYOU Virus (২০০০)
- ধরন: Worm
- প্রবেশ পথ: ইমেইল অ্যাটাচমেন্ট (Love-letter-for-you.txt.vbs)
- প্রভাব: ফাইল ওভাররাইট করে এবং ইমেইল কন্টাক্ট লিস্টে ছড়িয়ে পড়ে।
- ক্ষতি: প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি।
- বৈশিষ্ট্য: ইমেইলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সবচেয়ে কুখ্যাত ভাইরাসগুলোর একটি।
📖 রেফারেন্স: Symantec – ILOVEYOU Virus Analysis
২. MyDoom (২০০৪)
- ধরন: Worm
- প্রবেশ পথ: ইমেইল এবং পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্ক
- প্রভাব: সিস্টেমে ব্যাকডোর তৈরি করে হ্যাকারকে রিমোট অ্যাক্সেস দেয়।
- ক্ষতি: ইন্টারনেটের গতি ধীর করে এবং প্রায় ৩৮ বিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক ক্ষতি।
📖 রেফারেন্স: Kaspersky – MyDoom Virus
৩. Conficker (২০০৮)
- ধরন: Worm
- প্রবেশ পথ: নেটওয়ার্ক দুর্বলতা
- প্রভাব: নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে পড়ে, পাসওয়ার্ড চুরি করে, নিরাপত্তা সফটওয়্যার নিষ্ক্রিয় করে।
- ক্ষতি: বিশ্বব্যাপী লক্ষাধিক কম্পিউটার আক্রান্ত হয়েছিল।
📖 রেফারেন্স: Microsoft – Conficker Worm
৪. WannaCry Ransomware (২০১৭)
- ধরন: Ransomware
- প্রবেশ পথ: Windows SMB vulnerability
- প্রভাব: ফাইল এনক্রিপ্ট করে মুক্তিপণ দাবি করে।
- ক্ষতি: ১৫০টির বেশি দেশে ২ লাখেরও বেশি কম্পিউটার আক্রান্ত; হাসপাতাল ও ব্যাংকিং সেবা বন্ধ হয়ে যায়।
📖 রেফারেন্স: Europol – WannaCry Attack
৫. NotPetya (২০১৭)
- ধরন: Wiper (Ransomware-এর ছদ্মবেশ)
- প্রবেশ পথ: সফটওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে
- প্রভাব: ডাটা স্থায়ীভাবে মুছে ফেলে; ডাটা রিকভারি অসম্ভব।
- ক্ষতি: মূলত ইউক্রেনের অবকাঠামো ও বিশ্বব্যাপী বড় বড় কোম্পানিতে মারাত্মক ক্ষতি।
📖 রেফারেন্স: Symantec – NotPetya Analysis
সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা
কম্পিউটার ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি, তবে ব্যবহারকারীর সচেতনতা আরও গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ক্ষেত্রে ভাইরাস সংক্রমণ ঘটে আমাদের অসতর্কতার কারণে। তাই কিছু সাধারণ নিরাপত্তা অভ্যাস মেনে চললে ভাইরাস আক্রমণের ঝুঁকি অনেক কমানো সম্ভব।
১. সাইবার হাইজিন অভ্যাস (Cyber Hygiene)
সাইবার হাইজিন বলতে বোঝায়—কম্পিউটার ও অনলাইন একাউন্ট ব্যবহারে নিয়মিত ও সঠিক নিরাপত্তা অভ্যাস মেনে চলা।
এর মধ্যে রয়েছে—
- নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট করা
- অবিশ্বস্ত লিঙ্কে ক্লিক না করা
- পাসওয়ার্ড ম্যানেজমেন্ট টুল ব্যবহার করা
📖 রেফারেন্স: CISA – Cyber Hygiene Services
২. অনলাইন সেফটি ট্রেনিং
বিশেষ করে যারা অফিস বা ব্যবসায়িক কাজে কম্পিউটার ব্যবহার করেন, তাদের জন্য অনলাইন সেফটি ট্রেনিং নেওয়া জরুরি। এতে জানা যায়—
- ফিশিং ইমেইল চিনে ফেলা
- রিমোট ওয়ার্কে নিরাপত্তা বজায় রাখা
- সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং আক্রমণ প্রতিরোধ
📖 রেফারেন্স: StaySafeOnline – Training Resources
৩. নিরাপদ পাসওয়ার্ড ব্যবস্থাপনা
একই পাসওয়ার্ড বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে ব্যবহার করা বিপজ্জনক।
LastPass, 1Password, Bitwarden এর মতো পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করে শক্তিশালী ও ইউনিক পাসওয়ার্ড তৈরি এবং সংরক্ষণ করা ভালো।
📖 রেফারেন্স: NIST – Password Guidelines
৪. মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (MFA) ব্যবহার
যেখানে সম্ভব, Two-Factor Authentication (2FA) চালু করুন। এতে পাসওয়ার্ড চুরি হলেও হ্যাকার সহজে লগইন করতে পারবে না।
📖 রেফারেন্স: Microsoft – What is MFA
৫. ফিজিক্যাল সিকিউরিটি বজায় রাখা
শুধু অনলাইন সুরক্ষা নয়, কম্পিউটারকে শারীরিকভাবে সুরক্ষিত রাখাও জরুরি।
- পাবলিক জায়গায় unattended না রাখা
- USB পোর্টে তালা লাগানো বা নিষ্ক্রিয় রাখা
- ডিভাইস এনক্রিপশন চালু রাখা (BitLocker, FileVault)
📖 রেফারেন্স: Kaspersky – Physical Security Tips
কম্পিউটার ভাইরাসের ক্ষতি কি কি?
কম্পিউটার ভাইরাস বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি করতে পারে, যার ফলে আপনার কম্পিউটার ও গুরুত্বপূর্ণ ডাটা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। নিচে ভাইরাসের প্রধান প্রধান ক্ষতি গুলো উল্লেখ করা হলো—
১. ডাটা নষ্ট বা হারানো
ভাইরাস অনেক সময় আপনার গুরুত্বপূর্ণ ফাইল, ছবি, ভিডিও, ডকুমেন্ট ইত্যাদি মুছে ফেলতে পারে বা করাপ্ট করে দিতে পারে।
২. সিস্টেম ধীরগতি বা ক্র্যাশ
ভাইরাস সিপিইউ এবং মেমোরি ব্যবহার বৃদ্ধি করে কম্পিউটারের কাজ ধীর করে দেয় বা হঠাৎ ক্র্যাশ (বন্ধ) করে দিতে পারে।
৩. ব্যক্তিগত তথ্য চুরি
অনেক ভাইরাস আপনার পাসওয়ার্ড, ব্যাংক তথ্য, ক্রেডিট কার্ডের ডাটা চুরি করে সাইবার ক্রিমিনালের হাতে চলে যেতে পারে।
৪. অননুমোদিত প্রবেশাধিকার
ভাইরাস সিস্টেমে ব্যাকডোর তৈরি করে হ্যাকারদের দূর থেকে নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দেয়।
৫. নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে পড়া
একটি ভাইরাস যদি নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে অন্য সংযুক্ত কম্পিউটার ও ডিভাইস আক্রান্ত হতে পারে।
৬. অপ্রত্যাশিত পপ-আপ এবং বিজ্ঞাপন
কিছু ভাইরাস আপনার স্ক্রিনে বারবার পপ-আপ দেখায় এবং অপ্রয়োজনীয় বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে কাজের ব্যাঘাত ঘটায়।
৭. র্যানসমওয়্যার আক্রমণ
ভাইরাসের একটি ধরণ ফাইল এনক্রিপ্ট করে মুক্তিপণ দাবি করে, যদি মুক্তিপণ না দেওয়া হয় তাহলে ফাইলগুলো ব্যবহার অক্ষম হয়ে যায়।
ভাইরাস কম্পিউটারের কি ক্ষতি করে?
কম্পিউটারে ভাইরাস আক্রমণ হলে নিম্নলিখিত ক্ষতি ঘটতে পারে:
- ডাটা নষ্ট বা মুছে ফেলা: গুরুত্বপূর্ণ ফাইল, ডকুমেন্ট, ছবি ইত্যাদি হারিয়ে যেতে পারে।
- সিস্টেমের গতি ধীর হওয়া: ভাইরাস CPU ও মেমোরি বেশি ব্যবহার করে কম্পিউটার ধীর করে দেয়।
- ব্যক্তিগত তথ্য চুরি: পাসওয়ার্ড, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তথ্যসহ গোপনীয় তথ্য হাতবদল হতে পারে।
- সিস্টেম ক্র্যাশ বা হ্যাং হওয়া: কম্পিউটার হঠাৎ বন্ধ হয়ে যেতে পারে বা কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে।
- অপরিচিত প্রোগ্রাম চালু হওয়া: ভাইরাস নানান পপ-আপ, বিজ্ঞাপন বা অননুমোদিত সফটওয়্যার চালু করে।
- নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে পড়া: ভাইরাস নেটওয়ার্কের অন্য ডিভাইসেও সংক্রমণ ছড়িয়ে দিতে পারে।
সুতরাং, ভাইরাস কম্পিউটারের কার্যক্ষমতা ও নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি।
কম্পিউটার ভাইরাস ও এন্টিভাইরাস কি?
কম্পিউটার ভাইরাস কী?
কম্পিউটার ভাইরাস হলো ক্ষতিকর সফটওয়্যার বা প্রোগ্রাম যা নিজের কপি তৈরি করে কম্পিউটারের ফাইল, সফটওয়্যার ও সিস্টেমে ছড়িয়ে পড়ে। এটি ডাটা নষ্ট করা, সিস্টেম ধীরগতি সৃষ্টি, ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করা, এবং কম্পিউটারকে অকার্যকর করে ফেলার মতো ক্ষতি করে। ভাইরাস সাধারণত ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়া কাজ করে এবং বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যেমন ইমেইল, ইউএসবি ড্রাইভ, অবিশ্বস্ত ওয়েবসাইট ইত্যাদি।
এন্টিভাইরাস কী?
এন্টিভাইরাস হলো সফটওয়্যার যা কম্পিউটারে ভাইরাস ও ম্যালওয়্যারের উপস্থিতি শনাক্ত, প্রতিরোধ এবং রিমুভ করে। এটি রিয়েল-টাইম সুরক্ষা দিয়ে ভাইরাস থেকে সিস্টেমকে নিরাপদ রাখে। এন্টিভাইরাস নিয়মিত আপডেট হয় যাতে নতুন নতুন ভাইরাস শনাক্ত ও প্রতিরোধ করতে পারে।
সারাংশ:
- ভাইরাস = ক্ষতিকর প্রোগ্রাম যা কম্পিউটারকে হুমকি দেয়।
- এন্টিভাইরাস = সেই সফটওয়্যার যা ভাইরাস থেকে কম্পিউটারকে সুরক্ষা দেয়।
ভাইরাস কিভাবে কম্পিউটারের ক্ষতি করে
কম্পিউটার ভাইরাস বিভিন্ন উপায়ে আপনার সিস্টেমে ক্ষতি করে থাকে। নিচে প্রধান কয়েকটি প্রক্রিয়া তুলে ধরা হলো—
১. ফাইল বা ডাটা নষ্ট করা
ভাইরাস আপনার গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলো মুছে দিতে পারে অথবা করাপ্ট (ক্ষতিগ্রস্ত) করে দিতে পারে, ফলে ডাটা হারানোর ঝুঁকি থাকে।
২. সিস্টেমের গতি কমিয়ে দেওয়া
ভাইরাস কম্পিউটারের প্রসেসর ও মেমোরি বেশি ব্যবহার করে ধীর করে দেয়, ফলে কাজ করার গতি অনেক কমে যায়।
৩. ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করা
কিছু ভাইরাস আপনার পাসওয়ার্ড, ব্যাংক তথ্য, ক্রেডিট কার্ডের ডাটা চুরি করে সাইবার অপরাধীদের কাছে পাঠায়।
৪. অপ্রত্যাশিত প্রোগ্রাম চালানো
ভাইরাস পপ-আপ বিজ্ঞাপন দেখায়, অজানা সফটওয়্যার ইনস্টল করে, অথবা আপনার অনুমতি ছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহার করে।
৫. নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে পড়া
ভাইরাস এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে এবং নেটওয়ার্কের অন্যান্য ডিভাইসে সংক্রমণ ছড়াতে পারে।
৬. সিস্টেম ক্র্যাশ বা বন্ধ হয়ে যাওয়া
ভাইরাস কম্পিউটারকে হঠাৎ বন্ধ করে দিতে পারে বা বারবার রিস্টার্ট করিয়ে অসাধারণ অসুবিধার সৃষ্টি করে।
কম্পিউটার ভাইরাসের জনক কে?
কম্পিউটার ভাইরাসের জনক হিসেবে সাধারণত বব থমাস (Bob Thomas)-কে ধরা হয়। তিনি ১৯৭১ সালে প্রথমবারের মতো “ক্রিপ্টনিক্স (Creeper)” নামক ভাইরাস তৈরি করেন, যা প্রথম কম্পিউটার ভাইরাস হিসেবে পরিচিত।
ক্রিপ্টনিক্স ভাইরাসটি ARPANET (ইন্টারনেটের প্রাথমিক সংস্করণ) এ ছড়িয়ে পড়েছিল এবং কম্পিউটারের স্ক্রিনে “I’m the creeper, catch me if you can!” ম্যাসেজ দেখাতো।
এরপর, রে টমলিনসন (Ray Tomlinson) ক্রিপ্টনিক্স ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ হিসেবে “রিপার (Reaper)” নামক প্রোগ্রাম তৈরি করেন, যা প্রথম অ্যান্টিভাইরাস হিসেবে বিবেচিত।
সংক্ষেপে:
- কম্পিউটার ভাইরাসের প্রথম উদাহরণ: ক্রিপ্টনিক্স (Creeper)
- এর স্রষ্টা: বব থমাস (Bob Thomas)
- প্রথম অ্যান্টিভাইরাস: রিপার (Reaper), তৈরি করেন রে টমলিনসন
কম্পিউটার ভাইরাসের প্রতিষেধক কোনটি?
কম্পিউটার ভাইরাস থেকে সুরক্ষা পেতে নিম্নলিখিত প্রতিষেধকগুলো গ্রহণ করা জরুরি:
১. বিশ্বস্ত অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার
কম্পিউটারে একটি ভালো মানের অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ইনস্টল করে নিয়মিত আপডেট ও স্ক্যান চালানো উচিত। এটি ভাইরাস শনাক্ত ও নির্মূল করতে সাহায্য করে।
২. সফটওয়্যার ও অপারেটিং সিস্টেম নিয়মিত আপডেট রাখা
সফটওয়্যার ও উইন্ডোজ, লিনাক্স ইত্যাদি অপারেটিং সিস্টেমের নিরাপত্তা প্যাচ নিয়মিত ইন্সটল করতে হবে, যাতে নতুন ভাইরাস বা ম্যালওয়্যারের বিরুদ্ধে সুরক্ষা বজায় থাকে।
৩. অবিশ্বস্ত লিঙ্ক, ইমেইল ও ফাইল এড়িয়ে চলা
অজানা সোর্স থেকে প্রাপ্ত ইমেইল অ্যাটাচমেন্ট, লিঙ্ক বা সফটওয়্যার ডাউনলোড করা উচিত নয়। কারণ সেগুলোতে ভাইরাস লুকিয়ে থাকতে পারে।
৪. নিরাপদ পাসওয়ার্ড ব্যবহার এবং MFA চালু রাখা
শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার ও মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (MFA) চালু রাখলে হ্যাকারদের হাত থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।
৫. নিয়মিত ডাটা ব্যাকআপ রাখা
ফাইল বা ডাটার নিয়মিত ব্যাকআপ রাখলে ভাইরাস আক্রমণের পরও ডাটা পুনরুদ্ধার করা যায়।
সারাংশ:
ভালো অ্যান্টিভাইরাস, নিয়মিত আপডেট, সাবধানতা এবং সঠিক নিরাপত্তা অভ্যাসই হলো কম্পিউটার ভাইরাসের সেরা প্রতিষেধক।
কম্পিউটার ভাইরাস কি কি ক্ষতি করে
কম্পিউটার ভাইরাস বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি করে থাকে, যার ফলে আপনার কম্পিউটার ও ডাটা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। প্রধান ক্ষতিগুলো হলো—
- ডাটা নষ্ট বা হারানো: ভাইরাস গুরুত্বপূর্ণ ফাইল, ছবি, ডকুমেন্ট ইত্যাদি মুছে দিতে পারে বা ক্ষতিগ্রস্ত করে।
- সিস্টেম ধীর হওয়া: ভাইরাস CPU ও মেমোরি বেশি ব্যবহার করে কম্পিউটারের কাজের গতি কমিয়ে দেয়।
- ব্যক্তিগত তথ্য চুরি: পাসওয়ার্ড, ব্যাংক তথ্য, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য হাতবদল হতে পারে।
- অননুমোদিত প্রবেশাধিকার: ভাইরাস সিস্টেমে ব্যাকডোর তৈরি করে হ্যাকারদের দূর থেকে নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দেয়।
- নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে পড়া: ভাইরাস সংক্রমণ নেটওয়ার্কের অন্যান্য ডিভাইসেও ছড়িয়ে দিতে পারে।
- সিস্টেম ক্র্যাশ বা হ্যাং: কম্পিউটার হঠাৎ বন্ধ হয়ে যেতে পারে বা কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে।
- অপ্রত্যাশিত পপ-আপ ও বিজ্ঞাপন: ভাইরাস পপ-আপ দেখায় ও অবাঞ্ছিত বিজ্ঞাপন চালায়।
- র্যানসমওয়্যার আক্রমণ: ফাইল এনক্রিপ্ট করে মুক্তিপণ দাবি করে।
এ কারণে, ভাইরাস থেকে সুরক্ষা ও সতর্কতা অপরিহার্য।
কম্পিউটার ভাইরাস কিভাবে ছড়ায়
কম্পিউটার ভাইরাস বিভিন্ন উপায়ে ছড়িয়ে পড়ে। প্রধান ছড়ানোর পথগুলো হলো—
- ইমেইল অ্যাটাচমেন্ট
অজানা বা অবিশ্বস্ত ইমেইলের মাধ্যমে ভাইরাসযুক্ত ফাইল বা লিঙ্ক আসতে পারে, যা ওপেন করলে ভাইরাস সংক্রমণ হয়। - ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড
অবৈধ বা সন্দেহজনক ওয়েবসাইট থেকে সফটওয়্যার, গেম বা অন্যান্য ফাইল ডাউনলোড করলে ভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে। - USB ড্রাইভ বা পেনড্রাইভ
ভাইরাসযুক্ত পেনড্রাইভ বা এক্সটার্নাল ড্রাইভ অন্য কম্পিউটারে সংযোগ দিলে ভাইরাস ছড়াতে পারে। - নেটওয়ার্ক সংযোগ
একটি কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ানো সম্ভব। - ফিশিং লিঙ্ক ও সোশ্যাল মিডিয়া
সন্দেহজনক লিঙ্ক বা ফিশিং মেসেজ ক্লিক করলে ভাইরাস ইনস্টল হতে পারে। - অজানা সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন
অন্য কেউ তৈরি করা বা অবৈধ সফটওয়্যার ইন্সটল করলেও ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে।
সুতরাং, সতর্ক থাকা এবং বিশ্বস্ত উৎস থেকে সফটওয়্যার ডাউনলোড করাই ভাইরাস ছড়ানোর থেকে রক্ষা পাওয়ার অন্যতম উপায়।
কম্পিউটার ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ
আপনার কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত কিনা তা বুঝতে নিচের লক্ষণগুলো খেয়াল রাখতে পারেন—
- সিস্টেমের ধীরগতি
কম্পিউটারের কাজ করা ধীর হয়ে যাওয়া বা হঠাৎ হ্যাং হয়ে যাওয়া। - অজানা পপ-আপ বিজ্ঞাপন
নিয়মিত অপ্রত্যাশিত পপ-আপ বা বিজ্ঞাপন আসা। - ফাইল মুছে যাওয়া বা পরিবর্তিত হওয়া
আপনার ফাইল হঠাৎ হারিয়ে যাওয়া, নাম বা ফরম্যাট পরিবর্তিত হওয়া। - অননুমোদিত প্রোগ্রাম চালু হওয়া
অজানা সফটওয়্যার বা প্রোগ্রাম নিজে থেকে চালু হওয়া। - ইন্টারনেট ধীর হওয়া বা অস্বাভাবিক ডাটা খরচ
অজানা ব্যাকগ্রাউন্ড ডাটা ব্যবহার, ইন্টারনেট ধীরগতি। - সফটওয়্যার ক্র্যাশ বা সিস্টেম রিস্টার্ট হওয়া
কম্পিউটার হঠাৎ বন্ধ বা রিস্টার্ট হয়ে যাওয়া। - অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার বন্ধ হয়ে যাওয়া
অ্যান্টিভাইরাস নিজে থেকে কাজ করা বন্ধ করে দেওয়া। - অজানা ইমেইল বা সোশ্যাল মিডিয়া মেসেজ পাঠানো
আপনার একাউন্ট থেকে অজানা বার্তা পাঠানো।
৫ টি কম্পিউটার ভাইরাসের নাম
নিচে পাঁচটি পরিচিত কম্পিউটার ভাইরাসের নাম দেওয়া হলো—
- ক্রিপ্টনিক্স (Creeper)
- ILOVEYOU
- মাইক্রোসফট ওয়ার্ম (Microsoft Worm)
- মেলিসা (Melissa)
- সালামি ভাইরাস (Salami Virus)
১০ টি কম্পিউটার ভাইরাসের নাম
১০টি পরিচিত কম্পিউটার ভাইরাসের নাম দিলাম—
- Creeper
- ILOVEYOU
- Melissa
- Mydoom
- Conficker
- Stuxnet
- Michelangelo
- Nimda
- Zeus
- WannaCry Ransomware
কম্পিউটার ভাইরাস ও এন্টিভাইরাস এর তালিকা
কম্পিউটার ভাইরাসের তালিকা
- Creeper – প্রথম কম্পিউটার ভাইরাস (1971)
- ILOVEYOU – ইমেইলের মাধ্যমে ছড়ানো মারাত্মক ভাইরাস (2000)
- Melissa – ম্যাক্রো ভাইরাস যা ইমেইলের মাধ্যমে ছড়াতো (1999)
- Mydoom – ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুত ছড়ানো ইমেইল ওয়ার্ম (2004)
- Conficker – উইন্ডোজ নেটওয়ার্কে দ্রুত ছড়ানো ওয়ার্ম (2008)
- Stuxnet – ইন্ডাস্ট্রিয়াল কন্ট্রোল সিস্টেম আক্রমণকারী ভাইরাস (2010)
- Michelangelo – হার্ডডিস্ক ডাটা নষ্টকারী ভাইরাস (1992)
- Nimda – ইমেইল ও নেটওয়ার্ক উভয় মাধ্যমে ছড়ানো ভাইরাস (2001)
- Zeus – ব্যাংকিং তথ্য চুরি করা ট্রোজান (2007)
- WannaCry Ransomware – ফাইল এনক্রিপ্ট করে মুক্তিপণ দাবিকারী র্যানসমওয়্যার (2017)
🛡 এন্টিভাইরাস সফটওয়্যারের তালিকা
- Kaspersky Anti-Virus
- Norton AntiVirus
- Bitdefender Antivirus
- Avast Free Antivirus
- AVG AntiVirus
- McAfee Total Protection
- ESET NOD32 Antivirus
- Windows Defender (Microsoft Defender)
- Trend Micro Antivirus
- Sophos Home
কম্পিউটার ভাইরাস কি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
- কম্পিউটার ভাইরাস কি?
- ভাইরাস কিভাবে ছড়ায়?
- কম্পিউটার ভাইরাস কি কি ক্ষতি করে?
- ভাইরাস থেকে কম্পিউটার কীভাবে সুরক্ষা পাবে?
- ভাইরাস আক্রান্ত হলে কী করণীয়?
- র্যানসমওয়্যার কী?
- কোন অ্যান্টিভাইরাস ভালো?
- ভাইরাস শনাক্ত করার উপায় কি?
- ভাইরাস থেকে ডাটা রিকভার সম্ভব?
- ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ কী কী?
কম্পিউটার ভাইরাস সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ)
১. কম্পিউটার ভাইরাস কি?
কম্পিউটার ভাইরাস হলো ক্ষতিকর সফটওয়্যার যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার কম্পিউটারে প্রবেশ করে, নিজেকে কপি করে ছড়িয়ে দেয় এবং ডাটা ক্ষতি, সিস্টেম ধীর করা, বা ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতে পারে।
২. কম্পিউটার ভাইরাস কি কি ধরনের ক্ষতি করে?
ভাইরাস কম্পিউটারের ডাটা নষ্ট করে, ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে, সিস্টেম ধীর করে, অননুমোদিত অ্যাক্সেস দেয়, র্যানসমওয়্যার আক্রমণ ঘটায় এবং নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে পড়ে।
৩. কিভাবে বুঝব আমার কম্পিউটার ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে?
কম্পিউটার ধীর হয়ে যাওয়া, হঠাৎ রিস্টার্ট হওয়া, অজানা পপ-আপ আসা, ফাইল হঠাৎ মুছে যাওয়া বা খুলতে না পারা এবং ইন্টারনেট ডাটা অস্বাভাবিক খরচ হওয়া ভাইরাসের সাধারণ লক্ষণ।
৪. কম্পিউটার ভাইরাস সাধারণত কীভাবে ছড়ায়?
ভাইরাস ইমেইল অ্যাটাচমেন্ট, অবিশ্বস্ত ওয়েবসাইট থেকে সফটওয়্যার ডাউনলোড, ইউএসবি ডিভাইস, সোশ্যাল মিডিয়া লিঙ্ক এবং নেটওয়ার্ক শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে ছড়ায়।
৫. কিভাবে কম্পিউটার ভাইরাস থেকে সুরক্ষা পাবো?
বিশ্বস্ত অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করা, সফটওয়্যার ও অপারেটিং সিস্টেম আপডেট রাখা, অবিশ্বস্ত লিঙ্ক ও অ্যাটাচমেন্ট এড়িয়ে চলা, নিয়মিত ডাটা ব্যাকআপ রাখা এবং শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা প্রয়োজন।
৬. ভাইরাস আক্রান্ত হলে কি করণীয়?
ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করুন, সেফ মোডে কম্পিউটার চালু করুন, সম্পূর্ণ সিস্টেম স্ক্যান চালান, ভাইরাস কোয়ারেন্টাইন বা ডিলিট করুন, প্রয়োজন হলে অপারেটিং সিস্টেম রিইনস্টল করুন।
৭. র্যানসমওয়্যার কি এবং এটি কীভাবে ক্ষতি করে?
র্যানসমওয়্যার একটি ধরনের ভাইরাস যা আপনার ফাইলগুলো এনক্রিপ্ট করে লক করে দেয় এবং মুক্তিপণ দাবী করে। মুক্তিপণ না দিলে ফাইলগুলো ব্যবহার অক্ষম হয়ে যায়।
৮. ভাইরাস আক্রান্ত কম্পিউটারের ডাটা রিকভার করা সম্ভব কি?
ভাইরাসের ধরন এবং ক্ষতির মাত্রার উপর নির্ভর করে ডাটা রিকভার সম্ভব বা অসম্ভব হতে পারে। র্যানসমওয়্যার আক্রান্ত ফাইল রিকভার করা কঠিন, তাই নিয়মিত ব্যাকআপ রাখা সবচেয়ে জরুরি।
৯. কোন ধরনের অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ভালো?
বিশ্বস্ত অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার যেমন Kaspersky, Norton, Bitdefender, Avast, Malwarebytes ব্যবহার করা উচিত। এসব সফটওয়্যার নিয়মিত আপডেট দেওয়া হয় এবং রিয়েল-টাইম সুরক্ষা দেয়।
১০. কম্পিউটার ভাইরাস থেকে সুরক্ষার জন্য MFA কেন প্রয়োজন?
MFA বা মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন ব্যবহার করলে পাসওয়ার্ড চুরির পরও হ্যাকার সহজে লগইন করতে পারে না, ফলে আপনার সিস্টেম ও তথ্য অধিক সুরক্ষিত থাকে।
উপসংহার
আজ আমরা বিস্তারিতভাবে জানলাম কম্পিউটার ভাইরাস কি কি ক্ষতি করে এবং কীভাবে ভাইরাস আমাদের ডাটা, সিস্টেম পারফরম্যান্স ও ব্যক্তিগত তথ্যকে ঝুঁকিতে ফেলে। কম্পিউটার ভাইরাস থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নিয়মিত অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার, সফটওয়্যার আপডেট রাখা, অবিশ্বস্ত লিঙ্ক ও ফাইল এড়িয়ে চলা অত্যন্ত জরুরি।
আপনি যদি সচেতন থাকেন এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, তাহলে সহজেই এই ক্ষতিকর ভাইরাস থেকে আপনার কম্পিউটার ও তথ্যকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন। তাই আজ থেকেই শিখুন কম্পিউটার ভাইরাস কি কি ক্ষতি করে এবং সঠিক প্রতিরোধ নিন।
এখনই আপনার কম্পিউটার নিরাপদ করুন!
আপনি কি জানেন কম্পিউটার ভাইরাস কি কি ক্ষতি করে? আপনার মূল্যবান ডাটা হারানোর আগে বিশ্বস্ত অ্যান্টিভাইরাস ইন্সটল করে নিয়মিত সিস্টেম স্ক্যান করুন।
আরো জানতে এবং আপডেট পেতে আমাদের নিউজলেটারে সাবস্ক্রাইব করুন এবং নিরাপদ থাকতে সচেতন থাকুন!
সতর্কীকরণ বার্তা
এই ব্লগ পোস্টে দেওয়া তথ্য শুধুমাত্র শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে প্রদান করা হয়েছে এবং এটি কোনও নির্দিষ্ট সফটওয়্যার বা নিরাপত্তা সেবা ব্যবহারের বিকল্প নয়। কম্পিউটার ভাইরাস কি কি ক্ষতি করে বিষয়ক এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আপনার সিস্টেমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের সময় প্রফেশনাল পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কোনো ধরনের প্রযুক্তিগত সমস্যা বা তথ্য ক্ষতির জন্য লেখক বা ওয়েবসাইট কোনো দায়বদ্ধতা গ্রহণ করবে না।
লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন
গুগল নিউজে Multiseen সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন
প্রয়োজনীয় আরো পোস্ট সমূহ:-
মোবাইল ক্যামেরা ভালো করার সেটিংস জানুন সহজ উপায়ে
মোবাইল কেনার আগে যা খেয়াল করবেন: বাংলাদেশের জন্য Step‑by‑Step গাইড
Infinix Hot 60 Pro Review: দাম, ফিচার ও পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ
Best Smart Watch Bangladesh: বাজেট থেকে প্রিমিয়াম টপ স্মার্টওয়াচ